ওয়েব নিউজ |
যদি প্রশ্ন করা হয়—বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সবচেয়ে বড়ো অবদান কাদের? এক কথায় উত্তর আসবে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলছে। অথচ সেই চরম দুর্ভাগা প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া এবং ফেরত আসার সময় কতিপয় কর্মকর্তার হাতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। বিমানবন্দরে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই, তা এককথায় খুবই তিক্ত, অসম্মানজনক সর্বোপরি অমানবিক। বিদেশে থাকা শ্রমিকরা প্রতিবছর প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার পাঠায়।
বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। দেশের বাইরে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাল- সবুজের পতাকা সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জোগান দিয়ে আসছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে গড়ে ওঠা স্তম্ভে মজবুত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত। দেশের বর্তমান জিডিপিতে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রেখে চলা রেমিট্যান্স হয়ে উঠেছে দেশের উন্নয়ন ও মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীতির উল্লেখযোগ্য অংশীদার।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা। দেশের অর্থনীতিকে সজীব ও জাগ্রত রাখতে এবং প্রবাসীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করে সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই নতুন কর্মী নিয়োগে যেসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, তা রোধে দ্রুত কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে হবে। এটিকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে জোরপূর্বক শ্রমিক ফেরত পাঠানো আটকাতে এবং ফেরত আসা শ্রমিকদের পুনরায় অভিবাসনের জন্য সরকারকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা ছাড়া বিকল্প পথ এখন খোলা নেই। প্রয়োজনে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে দর–কষাকষি করে প্রবাসীদের শ্রমবাজার নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের অনেকে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছেন। যেসব পরিবার প্রবাসীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে দিনানিপাত করত, সেসব পরিবারের অধিকাংশই আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এদিকে সামনে শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েবের কারণে মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক কর্মী ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে নতুন করে দেশে ফেরা এবং দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের সব মিলিয়ে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিজনিত নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে এবং এখানে সুশাসনের শর্ত নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার পর বৈদেশিক শ্রমবাজারে দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি ব্যতীত মূল্যায়ন হবে না। তাই দেশে ফিরে আসা শ্রমিকদের পুনরায় কর্মস্থলে প্রেরণ ও নতুন জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যে বৈদশিক শ্রমবাজারের পরিবর্তিত চাহিদানুযায়ী কর্মদক্ষতাসম্পন্নরূপে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের জন্য কারিগরি সহায়তা সরবরাহে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিক উদ্যোগ জরুরি।
মনে রাখতে হবে—বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করা ছাড়া রেমিটেন্স, বিনিয়োগ, পর্যটন ও দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগই সফল হবে না।
রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা আমাদের দেশের মহামূল্যবান সম্পদ। দেশের উন্নয়নে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রয়োজন, নতুবা দেশের উন্নয়ন বিরাটকায় বাধাগ্রস্ত হবে। সুতরাং রেমিট্যান্স–যোদ্ধাদের দুর্দশা লাঘব ও স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন বলে সরকারের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা