আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

"বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স" নাম বাংলাদেশ, কাজ নোয়াখালী স্টাইল!

User Image
  ওয়েব নিউজ
প্রকাশিত - ১৬ এপ্রিল, ২০২৫   ১০:৫৯ পিএম
webnews24
ছবি: || ওয়েব নিউজ
নিজেস্ব প্রতিবেদক

প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে, ফেসবুকের অন্ধকার অরণ্যে এক চাঞ্চল্যকর নাটকের নাম— বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স নোয়াখালী (বিসিএফ)। ২০১২ সালের ১লা ডিসেম্বর, যাত্রা শুরু করে এই কমিউনিটি নামধারী ‘ফেইসবুকিয়ান ফ্যান্টাসি’, যার উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিটির সহায়তা। কিন্তু বাস্তবতার চোখে পড়ার পর জানা গেল, এখানে সহায়তা ছিল... শুধুই নিজেদের জন্য!

এটা যেন এক অভ্যন্তরীণ পারিবারিক ব্যাপার, যেখানে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এমডি নূর আলী এবং ক্যাশিয়ার—তিনারই স্ত্রী! পুরো টিমটাই মনে হয় এক "ফ্যামিলি প্যাক" অফার। একদিকে নিঃস্বার্থতার প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে অদৃশ্য শর্ত আর সুবিধার বান্ডিল—এভাবেই বিসিএফের ‘স্বার্থমূলক’ যাত্রা শুরু হয়!

প্রথম দিকে ছিল এক ঝাঁক ফ্রান্সের সুপরিচিত তরুণ, ফ্রান্সে জন্মানো আইনজীবী থেকে শুরু করে সমাজকর্মী, যারা সত্যিই চেয়েছিলেন ভালো কিছু করতে। কিন্তু খুব শিগগিরই তারা বুঝলেন—এই সংগঠনের ‘ভেতরের থলের বিড়াল’ মূলত পোষা না, পুরা বন্য প্রজাতির দানব!

বিটিভির মহাপরিচালক এমডি নুর আলী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে তার সুবিধাভোগী চরিত্রের জন্য পরিচিত, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখিয়েছেন। তিনি সবসময় তার অবস্থান পরিবর্তন করে, যেখানে এবং যখন সুবিধা পান, তখনই তা ভোগ করে থাকেন।

সরকার পরিবর্তনের আগেও এমডি নুর আলীকে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে, বিশেষত দূতাবাস কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি সরকারী সুবিধা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

আরো পড়ুন: "বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স- BCF"  এক ব্যক্তির স্বর্গরাজ্য!

তবে, বর্তমান সরকারের পরিবর্তনের পর এমডি নুর আলী তার কৌশল পরিবর্তন করেছেন। বিটিভির ব্র্যান্ডিং এর মত পরিবর্তন করে তিনি এখন বিএনপি ও জামাতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং তাদের রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে সুবিধা লাভের জন্য গোল টেবিলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।

এমডি নুর আলীর এই সুবিধাভোগী মনোভাব ও রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে তার অবিরাম সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনা রাজনৈতিক মহল এবং প্রবাসীদের মাঝে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে।

সংগঠন ঢোকো, ফেসবুক গ্রুপে লাফাও, বেরিয়ে পড়ো—এটাই নিয়ম!
যে কেউ কাজের আগ্রহ নিয়ে যোগাযোগ করলেই তিনার মনমতো হলেই প্রথমে Whatsapp এক্সিকিউটিভ মেম্বারদের গ্রুপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।কিছুদিন নানা পোস্টার ঝুলিয়ে, হঠাৎ একদিন শুনবেন—“ভাই, আপনেরে এক্সিকিউটিভ মেম্বার কেউ চায় না।” প্রবাসীরা বলছেন, “শুরুতে মনে হয়েছিল সমাজসেবা, পরে বুঝলাম—শুধু সাহায্যের নাটক।”

'বিজনেস' মানেই বিশ্বাসভঙ্গ? 
নিরলসভাবে ‘স্বেচ্ছাশ্রমে’ প্রাণপাত করা রিমা পা নামের সংগঠনের এক নিবেদিতপ্রাণ সদস্য বলেন, একদিন হঠাৎ করেই সংগঠনের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো—প্রত্যেকে এক হাজার ইউরো করে দাও! কেন? বিজনেস হবে ভাই, বিজনেস! কল্পনাই করো—সুন্দর একটা অফিস, ঝকঝকে চেয়ার, টেবিল, আর লোগো সহ একখানা দরজা! বলা হলো, "সব হবে সংগঠনের নামে, স্বপ্নের মতো চলবে সব কিছু!" যেন ভবিষ্যতে অফিস নয়, তারা একটা মঙ্গলগ্রহের শাখা খুলবেন।

কিন্তু সেই অফিস? ওটা থাক না, স্বপ্নেই ভালো ছিল। বাস্তবে? অফিস হল, দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়েই সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে খাটছেন।তারপর এলো করুণা। না না, মমতা নয়—একজন ‘করুণা’। আর করুণা আসতেই যেন বিজনেস ফান্ড আর অফিস উবে গেল ম্যাজিকের মতো!

আসলে একটা অফিস হয়েছে ঠিকই, তবে ভাড়াটা এখনো "স্বপ্নিল বাক্যে" পরিশোধাধীন। প্রেসিডেন্ট বলেন, “সব টাকা গেছে অফিস আর সংগঠনের খরচে।” কী খরচ? কত খরচ? কার কাছে খরচ? উত্তর শুনতে চাইলে তিনি চুপচাপ "যোগবিয়োগ" খেলেন।

আর যদি কেউ জিজ্ঞেস করতে সাহস করে—তাদের শুনতে হয়, “আপনাদেরকে তো এক্সিকিউটিভ হিসেবে কেউ চায় না!” যেনো সত্য জানতে চাওয়া একটা সাংঘাতিক অপরাধ! শেষমেশ বিজনেসের টাকা ফেরত চেয়ে একে একে সবাই বিদায় নেন। রইলেন শুধু প্রেসিডেন্ট—তার ‘চিরস্থায়ী’ চেয়ার আর এক গাদা প্রশ্নবিহীন অনুগামী নিয়ে।

অ্যাওয়ার্ড শিরোমনি না প্রেম-সম্মেলনী?
প্রতি বছর সংগঠন থেকে হয় 'অ্যাওয়ার্ড শিরোমনি'—যেখানে চিরস্থায়ী প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের ব্যক্তিগত পছন্দের মানুষরাই মূলত পুরস্কারপ্রাপ্ত। কেউ বলেন, “যারা তেল দিতে জানেন, তারাই স্টেজে ওঠেন, বাকি সবাই দর্শক।”

চিরস্থায়ী প্রেসিডেন্ট, চিরস্থায়ী বিতর্ক! 
এমডি নূর আলী, যে নাম শুনলেই প্রবাসীদের মনে চিরস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হওয়ার হাস্যকর চিত্র ভেসে ওঠে। তিনি এমন এক নেতা, যাকে কেউ সরাতে পারেননি—কী এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে তার চেয়ার সুরক্ষিত, তা আজও রহস্য! সংগঠনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত, তার চিরস্থায়ী অধিকার যেন এক মজার গল্পের মতো!

অভিযোগের খাতা ভারী, কিন্তু তিনি তো দুঃখিত! প্রথম অভিযোগ—প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর কাহিনী। ফেসবুকে কাঁদো-কাঁদো স্ট্যাটাস দিয়ে, কান্নার নাটক সাজিয়ে টাকা সংগ্রহ—হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, সেই কান্নার টাকায় নিজের পকেট ভারি করা! তবে, সেটা তো কেউ জানবে না! কারণ, কিছুতেই তো খবর আসবে না! প্রবাসীদের কষ্টের আড়ালে, ফেসবুকে হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস এবং তাকে ঘিরে সংগঠনের ‘সুখী’ বাস্তবতা—সবই এক অদ্ভুত অর্থ সংগ্ৰহের কৌশল!

তারপর আসে অতিরিক্ত আন্তরিকতা! প্রবাসীদের স্ত্রীর সাথে এমন প্রশ্ন, যেন গোটা প্যারিসেও তার 'বিশেষ দায়িত্ব'! “আপনি কী খাচ্ছেন?”, “সব ঠিক তো?”, “কী খবর?”—এমন একপ্রকার কিউট "কেয়ারিং", যেটা দেখে মনে হয়, প্রবাসী দম্পতির জীবনেও তাকে না দেখলে চলবে না!

এমডি নূর আলীর এই বিশেষ মনোভাব—যেখানে তার পুরোটাই একটি সুন্দর ‘শো’—তবে, চূড়ান্ত আঘাতটা আসে যখন তার কাছ থেকে ফিরে আসা সদস্যরা বলেন প্রবাসীকে “অল্প কিছু দিয়ে বাকিটা নিজের পকেটে”—এটা যেন তার জন্য দ্বিতীয় স্বাভাবিকতা!

তবে, সত্যি বলতে, এমডি নূর আলী এবং তার ‘চিরস্থায়ী প্রেসিডেন্ট’ সুলভ আচরণ শুধু একটিই প্রশ্ন তৈরি করে: এই কমিউনিটি কি আসলেই প্রবাসীদের জন্য, নাকি শুধুমাত্র এক পরিবারের ইচ্ছাপূরণের মঞ্চ?


ধারাবাহিক সিরিজ: ৬ পর্বের দ্বিতীয় পর্ব : "বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স" নাম বাংলাদেশ, কাজ নোয়াখালী স্টাইল!

প্যারিস BCF
ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন