![]() |
ওয়েব নিউজ |
প্যারিস শহরে বসবাসরত বাংলাদেশিদের একটি বিশাল কমিউনিটি—এটা শুনলে মনে হতে পারে, পুরো ফ্রান্সে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা একত্রিত হয়ে কাজ করছে, তাদের সম্মান এবং ঐতিহ্য রক্ষায় নিজেদের সংগঠিত করেছে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স’ ( BCF ) নামটি যা দাবি করে, তার সঙ্গে এর কার্যক্রম আদৌ মিলছে? না, এটি এক ব্যক্তির শখের রাজতন্ত্রে পরিণত হয়েছে!
‘বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স’ এর প্রেসিডেন্ট – এমডি নুর আলী – যিনি নিজেকে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মুখপাত্র হিসেবে প্রজেক্ট করেন, অথচ প্যারিসের অলি-গলিতে চলতে থাকা হাজারো বাংলাদেশি তার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান। এমডি নুর আলী একজন ‘কমিউনিটি লিডার’ হিসেবে পরিচিত হলেও, আদতে তিনি কি সবার প্রতিনিধি? নাকি পুরো ফ্রান্সে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের নাম ভাঙিয়ে নিজের ব্যবসা সামাল দিচ্ছেন?
‘বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স’—যে নামটি শুনে মনে হতে পারে এটি একটি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করা সংগঠন, সেখানে কিন্তু এর মালিকানা একেবারেই একজনের হাতে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন—এটি একটি এক ব্যক্তির মালিকানাধীন রাজতন্ত্র, যেখানে আপনি নামটি শুনে মনে করবেন পুরো বাংলাদেশের মানুষ এর আওতায় কাজ করছে। কিন্তু সত্যি বলতে, ফ্রান্সের প্রতিটি জেলা কিংবা বিভাগের বাংলাদেশি জনগণের সঙ্গেই এর কোন যোগসূত্র নেই!
এমডি নুর আলী একদিকে নিজেদের কমিউনিটি হিসেবে পরিচিতি দিচ্ছেন, অন্যদিকে একে বানাচ্ছেন তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের প্ল্যাটফর্ম! প্যারিসের মতো আন্তর্জাতিক শহরে যেখানে হাজার হাজার বাংলাদেশি থাকেন, সেখানে 'বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স'–এর কার্যক্রম কেবল একটি লোকের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য চালানো হচ্ছে। কোন সেবা বা প্রকৃত উন্নয়ন তো দূরের কথা, এমনকি সাধারন বাংলাদেশি জনগণও জানেন না তাদের নাম ব্যবহার করে কী ধরনের ব্যবসা চলছে!
আরেকটা মজার বিষয় হলো, প্যারিসে যেহেতু এত বাংলাদেশি বসবাস করেন, তাই তাদের মধ্যে কোন প্রকার কার্যক্রম বা বৈঠক করার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কেউ যদি এই ‘কমিউনিটি’ সম্পর্কে জানতে চায়, তবে একটাই উত্তর—"এটি একটা ব্যবসা, আর এমডি নুর আলী এর মালিক!"
তাহলে প্রশ্ন উঠেই যায়, “এটি কি আসলেই বাংলাদেশের মানুষের সংগঠন, নাকি এক ব্যক্তির ব্যবসার মঞ্চ?” যে নামটি পুরো দেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে পেশ করা হচ্ছে, সেটা কি কেবল একটি স্ট্রাটেজি নাকি সত্যি সত্যিই এটি দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে?
ফ্রান্সের অন্যান্য জায়গায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা যখন একে আরেকভাবে দেখতে শুরু করছেন, তখন এমডি নুর আলী আবারো 'বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স' এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ফ্রান্সে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের একে পরিণত করেছেন তার ‘নিজস্ব সাম্রাজ্য’।
এখন, সত্যি কি“বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স” এর মাধ্যমে কিছুই হচ্ছে, নাকি এমডি নুর আলী এখানে তার নিজস্ব স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন? সময় আসবে, যখন ফ্রান্সের বাংলাদেশিরা বুঝতে পারবে—এটি কোন কমিউনিটি নয়, এটি শুধু এক ব্যক্তির স্বার্থের জায়গা!
"বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স" নামটি কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, এই প্রশ্নটি যখনই আমাদের মনে উঁকি দিয়েছে, তখনই আমরা নেপথ্যে থাকা মহান নেতা, এমডি নূর আলীর সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু আমাদের চেষ্টা যেন ছিল স্রেফ সময়ের অপচয়! ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে আমরা একে একে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি, তবে প্রতিবারই ফোন রিসিভ করার বদলে, কেবল 'অবিশ্বাস্য নিঃশব্দতা'র অভিজ্ঞতা পেতে হয়েছে।
অথচ, যিনি নিজেকে 'বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স' এর সভাপতি দাবি করছেন, তার থেকে এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের বহু চেষ্টা! কিন্তু শেষপর্যন্ত, ফোনটি রিসিভ করতে যেন 'হুদা' হয়ে গেলেন নূর আলী সাহেব। হয়তো তিনি ওই 'কমিউনিটি' তে এতই ব্যস্ত, যে ফোনের কল আওয়াজও তার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন প্রশ্ন ওঠে, এমন একটি 'কমিউনিটি' নাম ব্যবহার করে, তিনি কি আসলেই ফ্রান্সের সব বাংলাদেশির প্রতিনিধি হতে চান, নাকি শুধুমাত্র কিছু ভদ্রলোকের ব্যবসায়িক মঞ্চ তৈরি করছেন? তবে এটা ঠিক যে, তার ফোন রিসিভ করার দক্ষতা এবং ব্যাখ্যা না দেওয়ার কৌশল সত্যিই এক ধরনের 'আর্ট'!
আমরা জানি, একসময় হয়তো একটি ব্যাখ্যা পাবো, কিন্তু যেহেতু এই 'কমিউনিটি' এর মাথা ফোন রিসিভ করতে পারেন না, তাই হয়তো আরো অনেক প্রশ্ন উন্মুক্ত রয়ে যাবে – যেমন, 'বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স' আসলে কী, এবং কে এই কমিউনিটির সদস্য?
ধারাবাহিক সিরিজ: ৬ পর্বের প্রথম পর্ব : "বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স- BCF" এক ব্যক্তির স্বর্গরাজ্য!