ওয়েব নিউজ |
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। এটি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। সবাইকে সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধার সওগাত নিয়ে আসে ঈদ। এর আনন্দ থেকে ধনী-নির্ধন কেউ বঞ্চিত নন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল উৎসাহউদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়ে থাকে। ঈদের সকালে সর্বস্তরের মুসলিমরা ঈদগাহে আসেন নামাজ পড়তে। সেখানে একে অপরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর ঘরে ঘরে চলে ফিরনি-পায়েসের আয়োজন। এর মধ্য দিয়ে সমাজে ভ্রাতত্ৃবের বন্ধন জোরদার হয়।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সেও রয়েছে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী। নানা আনন্দ-বেদনার মধ্য দিয়ে তারা ঊদ উদযাপন করবেন। প্রবাসীদের ঈদ মানে মনে শত কষ্ট নিয়েও ‘হ্যাঁ, আমি ভালো আছি’ বলা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা সত্যিই অন্য রকম আনন্দের। কিন্তু সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন প্রবাসীরা। দেশে ঈদ উদযাপন করা আর প্রবাসে উদযাপনের তফাত অনেক। কিন্তু পরিবারের হাল ধরতে এমন পরিস্থিতিকে মেনে নেন প্রবাসীরা। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এ কথা সত্য হলেও সবার জন্য সমান সত্য নয়। কারণ দেশে আত্মীয়-পরিজন নিয়ে মহা-আনন্দে ঈদ উদযাপন করলেও প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। আর তাই ঈদে তাদের আনন্দটা অতটা গাঢ় রঙ ধারণ করে না। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। এই কষ্টকে বুকে নিয়েই ফ্রান্সে বাংলাদেশি প্রবাসীরা ঈদ উদযাপন করে থাকেন। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপনের খোঁজখবর নিতে গিয়ে তেমনটাই আঁচ করা গেল। প্রবাসীরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের মতো এখানেও ঈদকে নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। কিন্তু প্রিয়জনদের হাজার মাইল দূরে রেখে ঈদ আনন্দ পাথরচাপা কষ্টে পরিণত হয়। আত্মীয়-স্বজন রেখে দূর দেশে ঈদ করাটা সত্যিই বেদনার।
প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ধনী–গরিবনির্বিশেষে সাধ্যমতো নতুন জামাকাপড় কেনেন। এ কারণে মার্কেট শপিং মলগুলোও জমজমাট থাকে। আমাদের দেশের দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, অন্যান্য দেশে উৎসব-পার্বণে যেখানে পণ্যের দাম কমানো হয়, সেখানে আমাদের দেশে উল্টো ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। এটা কেবল ঈদের পোশাকের ক্ষেত্রে ঘটে তাই নয়, পুরো রোজার সময়ে নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এ বছর এমন সময়ে আমরা ঈদ উদ্যাপন করছি, যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে। সেখানে নারী– শিশুসহ হাজার হাজার মানুষকে ইতিমধ্যে হত্যা করা হয়েছে বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে। এখনো সেখানে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। এক মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে গাজার মুসলমানদের এবার ঈদ উদ্যাপন করতে হবে। আমরা তাদের গাজার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করছি বিশ্বের সব শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে। ঈদুল ফিতর যে আনন্দের সওগাত নিয়ে এসেছে, তা সব মানুষের ঘরে অর্থবহ হোক।
পবিত্র রমজান আমাদের চিত্তশুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদুল ফিতর হচ্ছে সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর দিন। আজ ধনী-গরিব সবাই দাঁড়াবে এক কাতারে। ভুলে যাবে সব বৈষম্য, সব ভেদাভেদ। হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে।
আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করার তৌফিক সবার হোক—এই প্রত্যাশা। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে সম্প্রীতি ও শুভবোধের চর্চার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক, মানুষে মানুষে বৈষম্যের অবসান ঘটাক, এটাই কামনা। ঈদ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। সবাইকে ঈদ মোবারক