আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ
অভিবাসী আটক কেন্দ্র বন্ধের আহ্বান

ইটালি: অভিবাসনপ্রত্যাশীর ‘আত্মহত্যা

User Image
  ওয়েব নিউজ
প্রকাশিত - ১১ মার্চ, ২০২৪   ০৯:৪৩ পিএম
webnews24
ছবি: || অনলাইন থেকে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইটালি কর্তৃপক্ষের উপর কয়েকটি অভিবাসন কেন্দ্র বন্ধ করা নিয়ে চাপ বাড়ছে৷ রোমের একটি সমালোচিত অভিবাসী আটককেন্দ্র বন্ধ করার জন্য একাধিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে অনুরোধ এসেছে৷ ১৯ বছর বয়সি গিনির এক নাগরিক গত মাসে আটককেন্দ্রটিতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে৷

ইটালি ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে কিন্তু প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় রয়েছেন, এমন মানুষদের জন্য সবরকম "অবমাননাকর" শর্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন এই কেন্দ্র পরিদর্শনকারী বিরোধী সেনেটররা।

দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ইটালির ১০টি অভিবাসী প্রত্যাবাসন কেন্দ্রের সমালোচনা করে এসেছে। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন তারা৷ মানবাধিকার গোষ্ঠীর অভিযোগ, নথিবিহীন অভিবাসীদের জেলের থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে অভিযোগ ছাড়াই মাসের পর মাস এখানে আটকে রাখা হয়।

এই কেন্দ্রগুলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অস্থায়ী বাসস্থান৷ যাদের আশ্রয় আবেদন খারিজ হয়েছে, বা কাগজপত্র খতিয়ে দেখার সময় অপরাধমূলক বা অন্যান্য কারণে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়, তাদের এখানে রাখা হয়৷

তবে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা এবং মূল দেশগুলোর সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তির অভাবে প্রায় অর্ধেক বন্দিকে ফেরত পাঠানো হয়৷ কেন্দ্রগুলো কার্যত কারাগার হিসেবে কাজ করে৷ তবে সেখানে কারাগারের মতো পুনর্বাসন, শিক্ষাগত বা যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা নেই বলে দাবি করেছেন অধিকার গোষ্ঠীগুলো৷

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির ডানপন্থি সরকার কেন্দ্রগুলো বন্ধ করেনি৷ এমনকি ইটালির অভিবাসন প্রবাহ পরিচালনা করতে বৃহত্তর কৌশলের প্রয়োজনীয় দিক হিসাবে এগুলো সম্প্রসারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মেলোনির সরকার শরণার্থী এবং মানবপাচারকারীদের প্রতিরোধমূলক কৌশলের অংশ হিসাবে অভিবাসীদের আটকে রাখার সময় ১৮ মাস পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

র‌্যাডিকালি রোমা, ইটালিয়ান র‌্যাডিকাল পার্টির সঙ্গে যুক্ত একটি সংগঠন৷ শুক্রবার পন্তে গালেরিয়ায় রোমের প্রত্যাবাসন কেন্দ্র বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি অনলাইন পিটিশন শুরু করেছেন৷ বন্দিদের মধ্যে বারবার সহিংসতা, আত্মহত্যা এবং বিক্ষোভের ঘটনা উল্লেখ করেছে তারা।

গত মাসে, উসমান সিল্লা নামে গিনির এক নাগরিকের মরদেহ মেলে ওই অভিবাসন কেন্দ্রে৷ গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷ তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তবে ইটালির সঙ্গে তার জন্মস্থান গিনির কোনো প্রত্যাবাসন চুক্তি নেই। তার মরদেহ উদ্ধারের পর কেন্দ্রে থাকা একাধিক ব্যক্তি উসমানের বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেন৷ আইন প্রণয়নকারী কর্মীদের দিকে নানা জিনিস ছুড়তে থাকেন আটক হওয়া ব্যক্তিরা৷ এই ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১২৫ জন। সাধারণত ধারণক্ষমতার থেকে বেশি মানুষ থাকেন কেন্দ্রগুলোতে৷

রোমের প্রিফেক্ট অফিসের প্রধান মার্কো স্তুফানো বলেছেন, সাম্প্রতিককালে এখানে আরো ছয় জন অভিবাসী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, দুজনকে কেন্দ্রে ফেরত পাঠানো হয়, অপর তিনজনকে অন্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়৷ এই তিনজনের পরিস্থিতি পন্তে গালারিয়ার আটক কেন্দ্রের সঙ্গে ‘‘বেমানান’’ বলে মনে করা হয়েছিল৷

গত মাসে, মধ্য় বাম দলের মেয়র রবের্তো গুয়ালতিরিকে পন্তে গালেরিয়া বন্ধ করতে সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘‘জরুরি’’ আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছে রোমের সিটি অ্যাসেম্বলি৷ কারণ ‘‘সেখানে আটক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা করা হয়েছিল৷’’

বন্দিদের অধিকারের জন্য ইটালির জাতীয় ‘গ্যারান্টার’, মাউরো পালমা, ডিসেম্বরে কেন্দ্র পরিদর্শন করার পরে বিষয়টা নিয়ে ভাবেন। রোমের প্রিফেক্ট এবং পুলিশ প্রধানকে লেখা চিঠিতে, কেন্দ্রে নজরদারির অভাবের সমালোচনা করেছেন পালমা৷ তার কথায় কোনো সুবিধাকেন্দ্র যা মানুষকে তাদের মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে, সেখানে গুরুতর ঘটনার নিবন্ধনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা দরকার৷ সহিংসতার জন্য চিকিৎসা হস্তক্ষেপ, বন্দিদের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি৷

এই সপ্তাহে, তিনজন বিরোধী সিনেটর কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন৷ তারাও পরিস্থিতি দেখে অবাক৷

ইটালি অ্যালাইভ পার্টির সেন ইভান স্কালফারোত্তো বলেন, “এই জায়গায় থাকা তো শাস্তির চেয়েও ভয়াবহ”। বন্দিদের ঘরের পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি৷ কারণ সেগুলো এতটাই ছোট যে চোখে দেখা যায় না প্রায়৷

 তার কথায়, ‘’শৌচাগারগুলো মানুষের ব্যবহারের উপযোগী নয়৷ এইখানে অভিবাসীরা সারাদিন কোনো কাজ করেন না৷ এখানে কোনো শ্রম নেই, প্রশিক্ষণ নেই, শিক্ষা নেই৷ মানুষকে কোনো ইতিবাচক মনোভাব ছাড়াই এখানে রেখে দেওয়া হয়েছে।”

বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির ওয়াল্টার ভেরিনি বলেন, কেন্দ্রগুলোর সমালোচনা বছরের পর বছর ধরে কেউ না কেউ করে আসছে৷ এই কেন্দ্রগুলো যখন ১৮ মাস পর্যন্ত আটক রাখার অনুমতি দেয়, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রয়োজন।

তার কথায়, ‘‘আমাদের লড়াই করতে হবে কারণ এটা কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে মানানসই না৷’’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি প্রত্যাবাসন কেন্দ্রগুলোর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণকে সরকারের সামগ্রিক অভিবাসন কৌশলের একটি ‘মৌলিক’ উপাদান হিসাবে বর্ণনা করেন৷ তিনি বলেছেন, ভাঙচুর ও দাঙ্গার কারণে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে৷

একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ৫০% বন্দিদের প্রত্যাবাসন করা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় এ বছর এ পর্যন্ত প্রত্যাবাসনে ২০%-৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তিনি আগেই আশা করেছিলেন, প্রত্যাবাসনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু প্রত্যাবাসনের প্রকৃত সংখ্যা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম৷ ২০২৩ সালে দেড় লাখের বেশি এবং ২০২২ সালে এক লাখ পাঁচ হাজারের বেশি লোকের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে তিন হাজার অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তার কথায়, ‘‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো কোন সম্ভাবনা নেই৷ তবে এই কেন্দ্রগুলোতে এমন লোক রয়েছে, যাদের বসবাসের অনুমতিপত্রে অনিয়ম রয়েছে৷ তারা বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছেন বলে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে৷’’

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন