![]() |
ওয়েব নিউজ |
বিশ্বসংহতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠলো প্যারিসের রাজপথে দৌড় উৎসব গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হলো ‘প্যারিস ম্যারাথন ২০২৫’-এর ৪৮তম আসর, যেখানে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ১৪০টি দেশের ৫৫ হাজারেরও বেশি পেশাদার ও অপেশাদার দৌড়বিদ। এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং বিশ্বসংহতির এক জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে।
চ্যাম্প এলিজে থেকে শুরু, শেষ অ্যাভিনিউ ফোশে ঐতিহাসিক এই দৌড় শুরু হয় প্যারিসের চ্যাম্প এলিজে থেকে, যেখান থেকে দৌড়বিদেরা ছুটে চলেন লুভর মিউজিয়াম, নটর ডেম ক্যাথিড্রাল, আইফেল টাওয়ার, বাসতিল ও বোয়া দ্য ভিনসেন হয়ে অ্যাভিনিউ ফোশে গন্তব্যে পৌঁছান। ৪২.১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ যেন এক মোহনীয় ভ্রমণ—যেখানে ছড়িয়ে ছিল ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্যারিস শহরের প্রাণ।
উদ্বোধনে প্যারিসের মেয়রের বার্তা: "এই দৌড় একজোট হয়ে এগিয়ে চলার আহ্বান" সকাল ৮টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন প্যারিসের মেয়র অ্যান হিডালগো। তার গুলির শব্দে দৌড় শুরু হয় এবং মুখে ছিল এক দৃঢ় বার্তা—“এই প্রতিযোগিতা শুধু দৌড় নয়, বরং পৃথিবীর মানুষের জন্য একজোট হয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান।”
ফলাফল: আফ্রিকার দাপট–পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন কেনিয়ার বেনার্ড বিওয়ট—সময় ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট ২৫ সেকেন্ড, যা তার ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিং। দ্বিতীয়: জিবুতির ইব্রাহিম হাসান (২:০৬:১৩) তৃতীয়: কেনিয়ার সিলা কিপটু (২:০৬:২১)
নারী বিভাগে ইথিওপিয়ার বেদাতু হিরপা প্রথম হন ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড সময়ে। মাত্র ৪ সেকেন্ড ব্যবধানে দ্বিতীয়: ডেরা ডিডা (ইথিওপিয়া) তৃতীয়: অ্যাঞ্জেলা তানুই (কেনিয়া)
নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা: প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিশাল জনসংখ্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয় ৫০০০ পুলিশ কর্মকর্তা এবং ৩০০০ স্বেচ্ছাসেবক। উন্নতমানের মেডিকেল সাপোর্ট, পানীয় সরবরাহ ও নির্দেশনা ছিল সর্বত্র।
আয়োজকদের কণ্ঠে মানবিকতা: প্রধান আয়োজক Schneider Electric জানিয়েছে, এটি ছিল তাদের অন্যতম সফল আয়োজন। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা কেবল একটি দৌড় আয়োজন করিনি, আমরা বিশ্বকে একটি মানবিক বার্তা দিতে চেয়েছি।”
অংশগ্রহণকারীদের অনুভূতি: ব্রাজিলের রিকার্দো বলেন, “আমি বহু দেশে দৌড়েছি কিন্তু প্যারিসের রাজপথে দৌড়ানো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এই শহরের প্রতিটি ধুলিকণাতেই শিল্প, ইতিহাস ও ভালোবাসা।”
বাংলাদেশের এক অপেশাদার অংশগ্রহণকারী বলেন, “এই ম্যারাথনের জন্য আমি গত এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। আজ দৌড়াতে পারা আমার জন্য গর্বের এবং আবেগের।”
ক্রীড়ার চেয়েও বেশি কিছু: ৪৮তম প্যারিস ম্যারাথন আবারও প্রমাণ করলো—ক্রীড়া কেবল প্রতিযোগিতা নয়, এটি মানুষের মাঝে বন্ধনের শক্তিশালী মাধ্যম। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি পেরিয়ে মানুষ একত্রিত হয় শুধুমাত্র একটি লক্ষ্যে: অগ্রসর হওয়া।
শেষ পর্যন্ত এই দৌড় আমাদের মনে করিয়ে দেয়—গতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গন্তব্যের দিক, আর ক্রীড়ার আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে তার মানবিক আবেগে।