আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত

প্রকাশিত - ০১ মার্চ, ২০২৪   ১০:২৪ পিএম
webnews24
অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিনকজি কটেজ ভবনে আগুনের সূত্রপাত নিচতলা থেকে। তবে এটি সিলিন্ডার থেকে নাকি শর্টসার্কিট থেকে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগুনের ধর্ম ওপরের দিকে ওঠা। সাধারণত কোনো ফ্লোরে আগুন লাগলে তা ওপরের ফ্লোরের দিকে ধাবিত হয়। আগুনে নিচতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত সব ফ্লোর পুড়ে গেছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে আগুনের সূত্রপাত নিচতলা থেকেই। আর ভবনটিতে ছিল বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ। সবগুলোতেই ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। ওই গ্যাস সিলিন্ডারের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে নিচতলায় সিঁড়ির পাশেই ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। এ কারণে আগুন লাগার পর আটকে পড়া মানুষগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ যায় অনেকের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানান, দোতলায় থাকা ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ছড়ানো হলেও এটি সঠিক নয়। নিচের একটি দোকান থেকে আগুন ছড়িয়েছে। লাগুন লাগার পর কেউ বলছিলেন ওপরে আগুন লেগেছে। আবার কেউ বলেছেন নিচে আগুন লেগেছে। এ কারণে আটকে পড়া মানুষগুলো কোন দিকে যাবেন তা বুঝতে পারেননি। এ কারণে অনেক মানুষ মারা গেলেন। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মি. বেকারের ম্যানেজার (ক্যাশ) কামরুল জানান, চোখের সামনে মানুষগুলো মারা গেলেন। আমরা সবাই অসহায়ের মতো দেখলাম। ২০ মিনিটের মধ্যেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রাস্তায় যানজট থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে দেরি হয়। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের দেরি হওয়ার কারণও রয়েছে। সাধারণ মানুষ ও ‘ফেসবুক পার্টি’ আগুনের ভিডিও লাইভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ভবনটির ডানপাশে কেএফসিতে কর্মরত ওয়েটার আহাদ জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার সাধারণ মানুষ অন্যান্য মার্কেটে গিয়ে ফায়ার সেফটি চান। কেউ দেননি। বরং অন্যরা দোকান অফিস ও রেস্টুরেন্ট দ্রুত বন্ধ করে দেন। আগুন লাগা ভবনের সাততলার বাসিন্দা সাখাওয়াত জানান, নিচতলায় কিচেন থেকে আগুন লাগে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর গ্যাস বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। ফোন করার ১০ মিনিটের মধ্যে যদি ফায়ার সার্ভিস আসতে পারত তাহলে অনেক প্রাণ বেঁচে যেত।

এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেন, নিচের একটি ছোট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষ ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধে মারা যান। তিনি বলেন, ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল। দুটি লিফট ছিল। ভবনের নিচতলার প্রবেশমুখে আগুন লাগায় ওপর থেকে কেউ নামতে পারেননি। তিনি বলেন, কারা সিঁড়িতে সিলিন্ডার রেখেছে তা বের করা হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে পিবিআইর এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। এরপর দোতলায় যায়। পরে তা মুহূর্তের মধ্যে গোটা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। জসিম নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আগুনে ৪৬ জন মানুষ মারা গেলেও দগ্ধ হেেয়ছন মাত্র দুজন। বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। নিচে সিঁড়ির পাশে যদি সিলিন্ডার না রাখা হতো, তাহলে হয়তো এতগুলো মানুষের জীবন যেত না। যাদের ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের শরীরে পোড়ার ক্ষত নেই বললেই চলে। ভবনের তৃতীয়তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়াও একাধিক ফ্লোরে রেস্তোরাঁ ছিল। রেস্তোরাঁগুলোতে অনেক গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলো বিস্ফোরিত হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার যুগান্তরকে বলেন, স্ট্রাকচারাল ভবনে সাধারণত আগুন এত দ্রুত ছড়ায় না। ওই ভবনে অনেকগুলো রেস্তোরাঁ ছিল। সব রেস্তোরাঁয় ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। এছাড়া ছিল জ্বালানি তেল। গ্যাস আর জ্বালানির কারণেই আগুনের ব্যাপকতা ছিল অনেক বেশি। তিনি বলেন, সিঁড়ির পাশে গ্যাস সিলিন্ডার থাকার কারণে সেখানে আগুন অনেক বেশি। এ কারণে লোকজন নিচে নামতে পারেনি। যারা ছাদে উঠতে পেরেছিলেন তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত যে নিচতলা থেকে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে শর্টসার্কিট থেকে নাকি সিলিন্ডার থেকে-এটা এখনো নিশ্চিত নয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এখনো (শুক্রবার সন্ধায় ছয়টা) কার্যক্রম শরু করতে পারেনি। তাই এখনই এ নিয়ে নিশ্চিত করে বিস্তারিত বলা যাবে না। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস যখন ঘটনাস্থলে যায় তখন আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। ছয়তলা পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিনকজি কটেজে আগুন লাগে। এর ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। শুক্রবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন