ওয়েব নিউজ |
দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের তুলুজ শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন দখল করে বসবসরত ২৬৭ জন অভিবাসীকে উচ্ছেদ করেছে ফরাসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ, এক বছরের বেশি সময় ধরে ভবন দখল করে বাস করছিলেন অভিবাসীরা।
গেল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া ভবনটি নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয় ফরাসি কর্তৃপক্ষ। তুলুজ ফ্রান্সের অক্সিতানি রিজিওনের প্রধান শহর। যা দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে অবস্থিত।
মূলত ২০২২ সালের শেষের দিকে তুলুজ শহরের পল সেবাতিয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন স্কয়াট বা দখলে নিয়েছিল ২৫০ জনেরও বেশি অভিবাসীর একটি দল। সরকারি আবাসনের দাবিতে ভবনটি দখলে করেন তারা।
ফরাসি পুলিশ জানায়, “শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে পুলিশ বহিষ্কার কার্যক্রম শুরু করেছিল। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর এটা সম্ভব হয়েছে।”
তবে তুলুজের প্রশাসনিক আদালত গত বছরের ২৩ নভেম্বর ভবন থেকে অভিবাসীদের উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছিলেন। আদালত ভবনের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দিয়েছিলেন।
অর্থাৎ দুই মাসেরও বেশি সময় পর আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হল কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলতি মাসের ২৩ ফেব্রুয়ারি বলে, “বহিষ্কার আদেশ ঘোষণার সময় বিচারক ৪আর৩ নামক ভবনের স্যানিটারি সুবিধার অপর্যাপ্ততা, জনশিক্ষা পরিষেবার সঠিক কার্যকারিতা, ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা’’ বিশেষ করে ‘’বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা’’-এর মতো ঘটনাগুলো উল্লেখ করেন। এছাড়া ভবনটির অগ্নি প্রতিরোধ ব্যস্থাপনা না থাকার কথাও আদালত উল্লেখ করেছেন৷
তবে এই আইনি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় অভিবাসী এবং অভিবাসীদের সমর্থনকারীর বিস্মিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট অন্তত চলতি বছরের শীতকাল শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যকর না করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ফরাসি গণমাধ্যম ফ্রান্স-থ্রি জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। অভিবাসীদের কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে সময় লাগলেও শেষ পর্যন্ত সবাইকে বের করে আনা হয়।
পরবর্তীতে ভবনের ভবিষ্যতে নতুন করে প্রবেশ ঠেকাতে বেড়া দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া অভিবাসীরা ফের গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ ও কিশোর অভিবাসী। সোমবার থেকে অনেকেরই স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো।
স্থানীয় অভিবাসন সংস্থা তুস অঁ ক্লাস ৩১ জানায়, “প্রায় ৫০ জন তরুণ অভিবাসী নিয়মিত স্কুলে যান৷ তারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে।”
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন নারী এবং তার তিন বছরের কম বয়সি সন্তানকে সরকারি আবাসন ব্যবস্থায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরো তিনজন কিশোরকে নাবালক কি না মূল্যায়নের জন্য বাধ্যতামূলক কাঠামোতে পাঠানো হয়।”
স্থানীয় প্রেফেকচুর জানায়, রাষ্ট্রীয় পরিষেবা এবং ফরাসি অভিবাসন এবং ইন্টিগ্রেশন অফিস অফির এজেন্টরা প্রত্যেক অভিবাসীর প্রশাসনিক পরিস্থিতির মূল্যায়নের জন্য উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিল।
প্রেফেকচুরের তথ্য অনুযারে, ভবন থেকে ১২ জন অনিয়মিত অভিবাসী ছিলেন৷ তাদেরকে প্রাশাসনিক আটক কেন্দ্র বা ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। ১০ জন ব্যক্তিকে আশ্রয় আবেদন করা অবস্থায় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে ফরাসি দপ্তর অফির আবাসন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
এছাড়া অন্য দুজন ব্যক্তি আশ্রয় আবেদনের প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করায় তাদের সে সংক্রান্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
অভিবাসীদের মধ্যে থাকা দুটি পরিবার নিজ থেকে সরকারি সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানায় প্রেফেকচুর। বহিষ্কার হওয়া সংশ্লিষ্ট অভিবাসীদের বড় একটি অংশ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক।