আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ
চেয়ারসিংহাসনে' অটল অবস্থান

প্যারিসে দূতাবাস নয়, যেন ‘রাজতন্ত্র’!

User Image
  ওয়েব নিউজ
প্রকাশিত - ০৯ এপ্রিল, ২০২৫   ০১:২৪ পিএম
webnews24
ছবি: || ওয়েব নিউজ
বদরুল বিন আফরোজ, ফ্রান্স

রাষ্ট্রদূত এম এ তালহা-ওয়ালিদের বদলি কেবল কাগজে, বাস্তবে তারা ‘চেয়ারে’ অটুট! প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস। নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে লাল-সবুজ পতাকা, ভিসা-পাসপোর্টের টুকটাক জ্বালা-যন্ত্রণা, আর দূতাবাসের ভেতর বাঙালির চিরন্তন ‘গলার স্বর’। তবে এখন সেই দূতাবাস যেন হয়ে উঠেছে এক অলিখিত রাজতন্ত্রের কেন্দ্র। আর এই রাজ্য শাসন করছেন দুই অমোঘ নাম—রাষ্ট্রদূত এম এ তালহা ও তাঁর ছায়াসঙ্গী ওয়ালিদ বিন কাশেম।

সরকার বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি দূতাবাসের। জুলাই মাসে ঢাকায় ঢেউ উঠেছিল, অথচ প্যারিসে তখনও রাজকীয় শান্তি। বদলির আদেশ? সেটি নাকি গিয়েছে প্রিন্টারে, বের হয়েছে চায়ের কাপের নিচে রাখার উপযোগী পাতায়। তালহা-ওয়ালিদের দপ্তরে তা ঢুকতে পারেনি, কারণ সিকিউরিটি বলছে, “ফাইলের আইডি কার্ড ছিল না!”

‘তালহা-ওয়ালিদের বদলি আদেশ হয়েছে’—এমন গুঞ্জন এখন ফরাসি ক্যাফেগুলোতে চায়ের সাথে হালকা বিস্কুটের মতো। বলা হচ্ছে, ফাইল উঠেছে, অনুমোদনও হয়েছে, এমনকি রিপ্লেসমেন্ট নামও ঠিক ছিল! কিন্তু বাস্তবে? তাঁরা এখনও সেই ‘অলিম্পাসের দেবতা’র মতো সিংহাসনে আসীন।

দূতাবাসের এক কর্মী ব্যঙ্গ করে বললেন—“প্যারিসে ভূমিকম্প হলেও দূতাবাসের চেয়ার নড়বে না। কারণ ওটা সিসমিক প্রুফ, আর ওয়ালিদ ভাইয়ের প্রোফাইল ‘অবিনাশী’!”

"আগে ছিলেন রাষ্ট্রবিরোধী, এখন গেস্ট অব অনার!" জুলাই বিপ্লবের আগেও এম এ তালহা এবং ওয়ালিদ কাশেম দূতাবাসে চালিয়েছেন এক ধরণের মনিটরিং-শাসন।যিনি সরকার পরিবন্তী, তার ফাইল যেত ডি.জি.এফআই-এর কাছে। পাসপোর্ট বিষয়ে কথা বললেই, তারা হয়ে যেত চরিত্র বিশ্লেষণ। 

তালহা-ওয়ালি যুগে পাসপোর্ট মানে পুলিশ ভেরিফিকেশন, আর ভিসা মানে ব্যক্তিগত চেনাজানা। আগে যিনি তাদেরকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষ করতেন, এখন তিনি ফেসবুক লাইভে রাষ্ট্রদূতের পাশে হাসিমুখে পোজ দেন। আর যিনি আগে ফাইল দিয়ে হয়রান, এখন সরাসরি ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে ‘চা-কফি সহযোগে’ কূটনৈতিক আড্ডায় মত্ত!

এক প্রবাসীর মন্তব্য:“আগে ভাবতাম দূতাবাসে ঢুকতে ভিসা লাগে, এখন দেখি লাগে সেলফি আর স্ট্যাটাস!”

দূতাবাস না পুনর্মিলনী ক্লাব?
সরকার বদল হয়েছে, নীতিও বদল হয়েছে। কিন্তু দূতাবাসে বদল হয়েছে শুধু মেনুতে—‘খিচুড়ি’র জায়গায় এসেছে ‘পাস্তা’, কিন্তু শেফ ঠিক আগেরটাই! এখন দূতাবাসে দেখা যাচ্ছে এমনসব মুখ, যাদের একসময় লুকিয়ে চলতে হতো। এখন ‘নতুন বুলিতে’ ফিরেছে পুরনো মুখ। 

তাদের মুখে এখন নতুন বাণী “সবাইকে নিয়েই তো দেশ গড়তে হবে”—এই মানবিক বুলি শুনিয়ে আজ সেই মুখগুলোই দূতাবাসের ড্রয়িং রুমে অতিথি হয়ে আসছেন, মিটিংয়ে বসছেন, এমনকি ফেসবুক লাইভেও হাসিমুখে ফ্রেমে উঠছেন।

জামাত-বিএনপির কিছু ‘ভুলে যাওয়া বন্ধু’ হঠাৎ করেই রাষ্ট্রদূতের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন। কেউ রিসিপশন পেরিয়ে ঢুকে যাচ্ছেন সরাসরি ‘চা-ঘরে’, কেউ ওয়ালিদের সঙ্গে হেসে হেসে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।

একজন পুরনো কর্মচারী ফিসফিসিয়ে বললেন—“এই দূতাবাসে রাজনীতি চলে না, এখানে চলে নাটক। শুধু মঞ্চ বদলায়, চরিত্ররা আগের মতোই দক্ষ!”

প্রবাসীদের কটাক্ষ— “আগে যাদের ফাইল গোপনে যেত ডি.জি.এফআই-তে, আজ তারা ওয়ালিদের পাশে বসে কফি খায়। নাটকের চিত্রনাট্য এত দ্রুত বদলালেও দূতাবাসে এমন চরিত্র-রূপান্তর বিরল।”

জামাত-বিএনপি প্রেমে ‘আবার জোয়ার’? সরকার পরিবর্তনের পর দূতাবাসের ভেতরে যেন লুকিয়ে ফিরেছে পুরনো রাজনৈতিক আত্মীয়তা। দেখা যাচ্ছে লেজুর  ভিত্তিক সাংবাদিক - জামাত-বিএনপির পরিচিত কিছু মুখ ঘুরে বেড়াচ্ছেন দূতাবাসের ভেতরে। কেউ রাষ্ট্রদূতের কক্ষে চা পান করছেন, কেউ আবার ওয়ালিদের সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ হাসিতে মুখর। এমনকি কিছু 'পুরনো বন্ধু'—যাদের একসময় ধরা হতো 'রাষ্ট্রবিরোধী', এখন তাদের নিয়েই উঠছে পরিকল্পনা, ভাগ হচ্ছে প্রোগ্রাম, বিতরণ হচ্ছে 'প্রশংসাপত্র'।

একজন প্রবাসীর ব্যঙ্গোক্তি—“এটা দূতাবাস না জামাত-বিএনপি পুনর্মিলনী কমিটি?” বদলি আদেশ: শুধু ফাইলে, বাস্তবে ফাইলও হারা! তালহা-ওয়ালিদের বিরুদ্ধে বদলির আদেশ হয়েছে—এমন গুঞ্জন বহুবার উঠেছে।  কিন্তু বাস্তবতা? তাঁরা এখনও চেয়ারেই। আর ফাইল? হয়তো এখন কোথাও ‘চা কাপের নিচে চেপে রাখা’ কাগজে পরিণত হয়েছে!

অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে—বিশেষ কিছু টাকার লেনদেন, প্রভাবশালী ‘টাকাকেন্দ্রিক বন্ধুত্ব’, আর ‘পলিটিক্যাল স্টান্ট’-এর কল্যাণে তাঁরা বহাল তবিয়তে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। একজন দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মন্তব্য করলেন ব্যঙ্গ করে—“প্যারিসে ভূমিকম্প হলেও দূতাবাসের চেয়ার নড়বে না, কারণ ওয়ালি কাশেমের খুঁটি যে সিসমিক প্রুফ!”

প্রবাসীদের অভিমত: দূতাবাস নয়, নাট্যশালা! আজ প্রবাসীরা পাসপোর্ট পেতে হাঁপিয়ে উঠছেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে লিস্টে নাম তুলে অপেক্ষায় থাকছেন মাসের পর মাস।তবে কিছু ‘বিশেষ নাম’ বা ‘চেনা পরিচয়’ থাকলে? সেবাও মিলছে 'ভিআইপি স্পিড' এ! এমনকি অনেক সময় ভিসা অফিসারই যেন নিজে হাজির হচ্ছেন প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে।

একজন ক্ষুব্ধ প্রবাসীর বক্তব্য— দূতাবাসের সামনে লাইন দিলে কাজ হয় না। বরং ‘সেলফি লাইন’ ধরলে পাসপোর্ট আগে পাওয়া যায়!”

নতুন সরকার এলেও ‘রাজতন্ত্র’ বহাল! প্রতিবেদনটির এই শেষ লাইন লেখার সময়ও তালহা ও ওয়ালিদের কক্ষ থেকে আসছে হাসির শব্দ, ফাইল ও কফির কাপের ঠোকাঠুকি।

নতুন সরকার পরিবর্তন আনছে, নতুন নীতিমালা চালু হচ্ছে—কিন্তু প্যারিসে যেন সবকিছুই পুরনো ঘড়ির কাটায় চলছে।তালহা-ওয়ালি যুগল জুটি এখনও অক্ষত, দূতাবাস এখনও তাদের একচ্ছত্র রাজ্য।

আর জনমনে প্রশ্ন:“বাংলাদেশ কি প্রবাসেও বদলাবে, নাকি প্যারিস থাকবে ঢাকার রাজনীতির ফার্ম হাউজ শাখা?” উত্তর এখনো: ‘প্রক্রিয়াধীন’!

প্যারিস দূতাবা বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী
ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
চেয়ারসিংহাসনে' অটল অবস্থান