আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

প্যারিসে দূতাবাস না ‘দুর্নীতাবাস’? ওয়ালিদ বিন কাসেমের হঠাৎ দেশপ্রেম জাগরণ!

User Image
  ওয়েব নিউজ
প্রকাশিত - ০৫ এপ্রিল, ২০২৫   ০৫:৪৭ পিএম
webnews24
ছবি: || ওয়েব নিউজ
বদরুল বিন আফরোজ , প্যারিস, ফ্রান্স

“পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলাম, মনে হলো ব্যাংকে লোন নিতে এসেছি!”— এক ক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক!

বাংলাদেশের একজন দূতাবাস কর্মকর্তা কি কেবল পাসপোর্ট আর ভিসা প্রসেস করে থাকেন? ওয়ালিদ বিন কাসেমের কাহিনি শুনলে আপনার ধারণা বদলে যাবে। কারণ তাঁর কর্মজীবন কূটনীতির চেয়ে বেশি মনে করিয়ে দেয় ব্যবসা-বাণিজ্য, খরচ-বিনিয়োগ আর প্রভাব-বাণিজ্যের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ।

এক দূতাবাস, বহু নাটক
প্রবাসীরা অভিযোগ করছেন, স্পষ্ট সরকারি নীতিমালার বাইরে গিয়ে বিভিন্ন সেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। “ভিসা ফি ঠিক আছে, কিন্তু প্রসেসিং ফি, দ্রুত ফি, পাসপোর্ট বাণিজ্য, লাইসেন্স বাণিজ্য, এমনকি ‘ওয়ালিদ ফি’—সব মিলিয়ে এখন যেন টাকার গাছ লাগাতে হয়!”এসব খরচ মেটাতে!

তবে শুধু আর্থিক হয়রানিই নয়, এইসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে শুরু হয় হয়রানির আরেক অধ্যায়। অনেকদিন ধরে ‘কাশেম’ নামের এক ব্যক্তির কর্মকাণ্ড নিয়ে কেউ—সে সাংবাদিক হোক বা সাধারণ মানুষ—সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করলেই দেশে ফিরলে তাকে গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে ডিএজিএফআই (DGFI) দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়, পরে পাঠানো হয় পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে, করা হয় মানসিক টর্চার।

বিশেষ করে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কেউ এই অনিয়ম প্রকাশ করলে, তার প্রতিনিধিত্ব বাতিলের জন্য সংবাদপত্র বা টেলিভিশন অফিসে চাপ দেওয়া হয়। বলা হয়—আপনাদের এই প্রতিনিধির  বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে"এই সাংবাদিককে বাদ দিতে হবে, না হলে তোমাদের প্রতিষ্ঠানকেও আইনের আওতায় আনা হবে।"

একজন প্রবাসী এ অবস্থাকে ব্যঙ্গ করে বলেন—“দেশে ফিরলেই যেন ডিজিএফআই আর পুলিশ দিয়ে বিশেষ ‘অভ্যর্থনা’—এটাই এখন ওয়ালীদের নতুন নিয়ম!”

'বিশেষ সম্পর্ক' ভিত্তিক সেবা:
পরিচিত মুখ দেখলে সার্ভিস দ্রুত, না হলে ফাইল ‘হারিয়ে’ যায়। একটি ঘটনায় দেখা গেছে, এক প্রবাসী তার পাসপোর্টের জন্য ৩ মাস অপেক্ষার পর জানতে পারেন, “ফাইল তো হারিয়ে গেছে ভাই, আবার প্রথম থেকে শুরু করেন।”

রাষ্ট্রীয় খরচে বিলাসবহুল গাড়ি ভাড়া, অফিসের নামে রেস্টুরেন্টে ব্যক্তিগত ডিনার, এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘নিজস্ব বন্ধুদের’ আমন্ত্রণ—এসবই সাধারণ অভিযোগ এখন।

স্পন্সরের আড়ালে সন্দেহজনক বাণিজ্য:
প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়ালিদ বিন কাসেমের বিরুদ্ধে অনেকবার উঠেছে অভিযোগ—রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগোকে ‘স্পন্সরশিপ’ আকারে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কার্যক্রমে জড়িত থাকার। বিশ্লেষকদের মতে, এসব ‘স্পন্সর করা’ প্রোগ্রাম ছিল আসলে লোকদেখানো। বাস্তব চিত্র হচ্ছে, এসব আয়োজনের আড়ালে পরিচালিত হয়েছে অভিবাসন প্রক্রিয়ার নামে আদম ব্যবসার একটি সুপরিকল্পিত চালচিত্র।

দূতাবাসের লোগো ব্যবহার করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ‘স্পন্সর’ হিসেবে নাম দেয়া হয় । এতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা যুক্ত হওয়ায় আয়োজনে সহজেই সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি হয়। এসব প্রোগ্রামের আড়ালে নির্দিষ্ট কিছু এজেন্টের মাধ্যমে অভিবাসনের নামে অর্থ লেনদেন এবং লোক পাঠানোর ব্যবস্থা চলতো।

একজন প্রবাসী মন্তব্য করেন,
“আমরা ভেবেছিলাম দূতাবাস আমাদের পাশে আছে। পরে বুঝেছি, ওটা ছিল এক ধরনের ‘সিল মোহর’—যার ভেতরে লুকানো ছিল একেবারে অন্য খেলা।” এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহারের বিষয় নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

"এই দূতাবাস তো VIP ক্লাব!"
একজন প্রবাসী নেতার মন্তব্য, “আমাদের দূতাবাস এখন সাধারণ নাগরিকদের জন্য নয়। এখানে ঢুকতে হলে ওয়ালিদ সাহেবের তালিকায় নাম থাকতে হয়। কেউ বলে এটা VIP ক্লাব, কেউ বলে 'ওয়ালিদ অ্যান্ড কোঃ'।”

এই ইস্যু নিয়ে এখন ফ্রান্সের বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, “দূতাবাস হচ্ছে রাষ্ট্রের মুখপাত্র। আর যদি সেই মুখেই দুর্নীতির দাগ লাগে, তাহলে বৈদেশিক সম্পর্কও ব্যর্থ হয়।”

একজন রাজনীতিক আলোচক বলেন: “দূতাবাস যদি হয় ব্যক্তিগত সম্পত্তির মত, তাহলে রাষ্ট্র কি তাহলে পেছনে বসে দর্শক হবে?” সরকারি মহল এখনো নিশ্চুপ। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, “বিষয়টি নজরে এসেছে, যথাযথ তদন্ত হবে।” তবে কবে হবে, কে করবে—এ নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।

মিডিয়াপাড়ায় ঝড়,
মেম, স্ট্যাটাস আর ট্রল—সব কিছুতেই সব সময় ‘ওয়ালিদ ভাই’ টপ ট্রেন্ডিং। কেউ লিখছেন: "ওয়ালিদ সাহেবের কাজের ধরন দেখে মনে হচ্ছে উনি রাষ্ট্রের নয়, রাষ্ট্র ওনার!"

প্যারিসের আলো ঝলমলে রাস্তায় বাংলাদেশের দূতাবাসের এই অন্ধকার অধ্যায় নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। প্রবাসীরা জানেন, তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে পাঠিয়েছে—কিন্তু তিনি যদি হয়ে ওঠেন নিজের স্বার্থের প্রতিনিধি, তখন রাষ্ট্রের সম্মানই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

প্যারিস বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী
ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
চেয়ারসিংহাসনে' অটল অবস্থান