ওয়েব নিউজ |
আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন ডিল বা দ্রুত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় এসব বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে ব্রিটিশ সরকার৷
গত বছর প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছেন৷ যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে এসব বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য ছিল ১২ মাসের মধ্যে আশ্রয় চেয়ে আবদেন করা৷
যুক্তরাজ্যের ভিসার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ তাই দুই দেশের দ্রুত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য৷
শিক্ষার্থী, কর্মী বা ভিজিটর ভিসা নিয়ে এসব বাংলাদেশিরা ২০২৩ সালের মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছেন৷ ব্রিটেনে স্থায়ী হতে ‘ব্যাক ডোর’ বা ‘অসাধু পন্থা’ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য৷ কিন্তু দেখা গেছে, মাত্র পাঁচ শতাংশ বাংলাদেশির আশ্রয় আবেদন সফল হয়েছে৷
যুক্তরাজ্যের অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি সই করেছে৷ এই চুক্তির অধীনে যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে শুধুই তারাই নয়, বরং যারা অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে তাদের সবাইকে ডিপোর্ট করার প্রক্রিয়াটি সহজতর হবে৷
১৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রথম যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে এই চুক্তিটি সই হয়েছে৷ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশ তাদের অংশীদারত্ব জোরদার করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে৷
যুক্তরাজ্য সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের মধ্যে সাম্প্রতিক এক বৈঠকের ভিত্তিতে ওয়ার্কিং গ্রুপটি তৈরি হয়েছে৷ ওইসময় বাংলাদেশর প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ বা ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি রয়েছে৷ ওই সময় ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তিতেও সম্মতি দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান৷ এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানায় অ্যান-মেরি ট্রেভিলিয়ান৷
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর টমলিনসন বলেন, ‘‘অনিয়মিতভাবে আসা বা থাকা বন্ধ করার জন্য ডিপোর্ট বা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং এটি একটি দারুণ বিষয় যে আমরা তাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসনকে গতিশীল করাসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করছি৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়েছি, এ ধরনের চুক্তিগুলো অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে৷ বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন এবং সবার জন্য একটি ন্যায্য ব্যবস্থা তৈরি করতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত৷’’
সাধারণত ভিসার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি পাওয়া যায়৷ সেটা কয়েক মাস পর্যন্তও হতে পারে৷ কিন্তু যারা আশ্রয় আবেদন করেন তারা দীর্ঘদিন বা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান৷ কারণ, মানবাধিকার আইন কিংবা আদালতের কারণে তাদের ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে৷
গত মাসে ফাঁস হওয়া একটি সরকারি নথিতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা ২১ হাজার ৫২৫ জন ব্যক্তি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ যা আগের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেড়েছে৷
এর অর্থ দাঁড়ালো, ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা প্রতি ১৪০ জনে একজন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ গত এক দশকের পরিসংখ্যান বলছে, এক লাখ দুই হাজার মানুষ অল্পদিনের ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসে স্থায়ী হতে আশ্রয় আবেদনের পথ বেছে নিয়েছেন৷
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি৷ যুক্তরাজ্যে ভিসা নিয়ে এসে আশ্রয় আবেদনের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ শীর্ষ পাঁচে রয়েছে৷
সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় চাওয়া মানুষের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছেন পাকিস্তানের নাগরিকেরা৷ দেশটির ১৭ হাজার চারশ নাগরিক ভিসা নিয়ে এসে আশ্রয় আবেদন করেছেন যুক্তরাজ্যে৷ এরপরেই আছে বাংলাদেশের নাম৷ আশ্রয় চেয়ে আবেদন করা বাংলাদেশির সংখ্যা ১১ হাজার৷ সাত হাজার চারশটি আবেদন নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে ভারত৷ ছয় হাজার ছয়শ আবেদন নিয়ে চতুর্থ নাইজেরিয়া এবং ছয় হাজার আবেদন নিয়ে পঞ্চম স্থানে আফগানিস্তান৷
ভিসা নিয়ে এসে যারা আশ্রয় আবেদন করেন তাদের তথ্য যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে ভিসা-অ্যসাইলাম স্যুইচিং টেবিল নামে সংরক্ষণ করা হয়৷
নিয়মিত অভিবাসন সহজ করা, ভিসার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানো এবং তথ্য আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ৷
২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই বিভিন্ন দেশের এমন ২৬ হাজার মানুষকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি৷
এর আগে আলবেনিয়ার সঙ্গেও ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য৷ ওই চুক্তির আওতায় আলবেনিয়া থেকে ছোটো নৌকা নিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা অন্তত ৯০ শতাংশ কমেছে৷