আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

প্যারিসে ‘তীব্র ক্ষুধায়’ ভুগছে ৫৩ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্করা

User Image
  ওয়েব নিউজ
প্রকাশিত - ১৭ মে, ২০২৪   ১১:৪৬ এএম
webnews24
ছবি : সংগ্রহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস অঞ্চলে ১৬ বছরের কম বয়সি অপ্রাপ্তবয়স্কের ৫৩ শতাংশ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে৷ শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার-এর এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷

আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলো নিয়ে কাজ করলেও উন্নত দেশগুলো নিয়েও সমীক্ষা প্রকাশ করে৷ তবে বিশ্বের অন্যতম ধনী শহর প্যারিসের অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের নিয়ে প্রকাশিত সমীক্ষায় ফুটে উঠেছে হতাশা৷

চলতি শীতে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত সম্পদ ছাড়া প্যারিস অঞ্চলে অবস্থানরত ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সি একশ বিদেশি অপ্রাপ্তবয়স্কের উপর সমীক্ষাটি চালায় সংস্থাটি৷

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব তরুণদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে৷ যাদের বেশিরভাগই আফ্রিকার দেশ গিনি এবং আইভরি কোস্ট থেকে অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে এসেছেন৷ ভুক্তভোগীরা প্যারিস অঞ্চলের রাস্তায় রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন৷ বেশিরভাগ সময় পর্যাপ্ত খাবার জুটছে না তাদের৷’’

অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার-এর ফ্রান্স মিশনের প্রধান হেলেন কুয়েউ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘এটি ফ্রান্সের জন্য স্পষ্টতই দুঃখজনক৷ কর্তৃপক্ষ ক্ষুধা মেটাতে তার দায়িত্ব পালন করছে না৷ অনেক ক্ষেত্রে এটি অসহনীয়৷’’

এনজিও এবং মাঠ পর্যায়ের তদন্তের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি তৈরি করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনের দায়িত্বে থাকা গবেষকদের মতে, এই প্রতিবেদনের ফলাফল ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷’

পড়ুন: ফ্রান্সে একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে পালিয়েছে ১০ অভিবাসী

বিশেষ করে বাসস্থানের অপর্যাপ্ততা, চিকিৎসা সহায়তার অভাব এবং স্কুলে যেতে না পারা ছাড়াও জরিপের আওতায় থাকা তরুণেরা প্রায়ই ক্ষুধার্ত হয়ে রাতে ঘুমাতে যায়৷

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতির পেছনে প্রথম কারণ হল এসব কিশোর রাষ্ট্র দেখছেন না৷ কারণ তারা ফ্রান্সে এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক বা ১৮ বছরের কম বয়সি হিসাবে স্বীকৃতি পাননি। যার ফলে ফরাসি বিভাগীয় শিশু কল্যাণ দপ্তর (এএসই) তাদের সার্বিক যত্নের দায়িত্ব নিচ্ছে না৷

এসব তরুণদের বেশিরভাগই তাদের প্রাথমিক আবেদনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিশু বিষয়ক আদালতে আপিল করেন৷ এরপর তাদের আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হয়৷

কিন্তু কয়েক মাস ধরে চলা আপিল আবেদনের সময় তাদেরকে এক প্রকার রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়৷ তরুণেরা কার্যত কোনো সমাধান ছাড়াই দিন পার করতে বাধ্য হয়।

এছাড়া তারা নতুন অভিবাসী হওয়ায় ফ্রান্স সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা থাকে না৷ তাই নিজেদের খাওয়ার জন্য তারা প্রধানত এনজিওগুলোর খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল থাকেন৷ সমীক্ষা অনুসারে, তাদের কাছে পরবর্তী দিনগুলোর জন্য অতিরিক্ত কোনো খাদ্য মজুত থাকে না।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণেরা বেশিরভাগ সময় সংস্থাগুলোর খাদ্য বিতরণ পয়েন্ট সম্পর্কেও ধারণা রাখেন না৷ কারণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো বেশিরভাগ সময় তাদের বিশ্রামের জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকে৷ যা তাদের নিয়মিত উপস্থিতি সীমিত করে৷

ইনফোমাইগ্রেন্টস বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ সংগ্রহকালে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখা পায়৷ তারা পুলিশের ধাওয়া থেকে বাঁচতে এবং গণপরিবহন বা নাভিগো পাস ছাড়া ট্রেন ও মেট্রোতে চড়তে ভয় পান৷ অনেকেই হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে শুধু একটি এলাকায় খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে পছন্দ করেন৷ বাকি এলাকায় যাওয়ার শারীরিক সক্ষমতাও তাদের থাকে না৷ 

হেলেন কুয়েউ ব্যাখ্যা করেন, ‘‘আমাদের জরিপে অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি তরুণ তীব্র ক্ষুধায় আক্রান্ত৷ যাদের অনেকেই ২৪ ঘন্টায় কিছু না খেয়ে রাতে বিছানায় যান৷ আমরা ক্ষুধার এই স্তরটি বের করতে স্বীকৃত বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করেছি৷ এটি ২০১৯ সাল থেকে ফ্রান্সে পরিচালিত সমস্ত সমীক্ষার ফলাফলকে ছাড়িয়ে গেছে৷’’

সংস্থাটির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘‘আমাদেরকে অবশ্যই পরিসংখ্যানের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ ৫৩ শতাংশ তীব্র ক্ষুধা এমন একটি স্তর যা আমরা পশ্চিম আফ্রিকায় তীব্র মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে থাকা দেশগুলোতে দেখতে পাই৷ এটি উদ্বেগজনক প্রবণতা৷ এখান থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা অসম্ভব৷’’

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রায় ৩৯ শতাংশ তরুণ-তরুণী মাঝারি ক্ষুধায় আক্রান্ত এবং মাত্র ৮ শতাংশের ক্ষুধা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নেই৷

ফ্রান্সে অভিভাকহীন বিদেশি অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোট সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন৷ তাদের বড় একটি অংশ নানা কারণে বিভিন্ন অভিবাসন সংস্থার নেটওয়ার্ক থেকে বাদ পড়ে যায়৷

ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন অফ ইয়াং এক্সাইলস ইন ডেঞ্জার (সিএনজেইডি) পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ফ্রান্সের ৮৩টি ডিপার্টমেন্টে সক্রিয় প্রায় একশত সংস্থা এবং এনজিওর তথ্য অনুসারে কমপক্ষে তিন হাজার ৪৭৭ জন বিদেশি তরুণ অপ্রাপ্তবয়স্ক স্বীকৃতির প্রক্রিয়ায় আছেন৷ তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি চলতি বছরের মার্চ মাসে কোন প্রকারের আবাসন ছাড়াই রাস্তায় ছিলেন।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন