ওয়েব নিউজ |
সিলেটের স্বনামধন্য মাদ্রাসা জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার এর শুরা বোর্ডের বৈঠকে মাদ্রাসার ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন বেফাক বোর্ড এর সহ সভাপতি গহর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু। সাথে শারিরীকভাবে লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য সহল আল রাজি।
জানা যায় ২০১৮ সালে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের ইন্তেকালের পর তাঁর ছেলে সামিউর রহমান মুসা মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মুসা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মাদ্রাসার হিসাব অডিট না করে তিনি তাঁর মর্জি মাফিক হিসাব রক্ষক নিয়োগ দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
এদিকে মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন বকেয়া থাকার কারণে শিক্ষকরা বার বার মজলিসে আমেলা ও শুরার কাছে বেতন বৃদ্ধির আবেদন করে আসছিলেন। মাদ্রাসার শাইখুল হাদীসের বেতন ৪৫০০ টাকা, মুহাদ্দিসদের বেতন ৪২০০ টাকা হারে অতি নিম্ন স্কেলের বেতনে চলছিলো তাঁদের শিক্ষকতা। এমনকি ৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসা একজন শিক্ষকের বেতন এখনও ১৭০০ টাকা দেয়া হচ্ছে। যা বর্তমান সময়ে কমই নয় শুধু হাস্যকরও বটে।
এই ব্যাপারে প্রিন্সিপাল মুসার সাথে আমেলার সদস্যরা বার বার বৈঠকে বসলেও তিনি বেতন বৃদ্ধিতো দূরের কথা বকেয়া বেতন দিতেই অপারগতা প্রকাশ করেন। কখনও তিনি বলেন, "পুষলে থাকেন, না পুষলে চলে যান"। বিষয়টি আমেলা এবং শুরার কিছু সদস্য আমলে নিয়ে মাদ্রাসার অডিটের জন্যে প্রিন্সিপালের নিকট জোর দাবী জানান।
এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে অডিটের দায়িত্ব দেয়া হয় একটি কোম্পানিকে। তারা অডিট রিপোর্ট দায়সারাভাবে পেশ করলে কমিটি শুরার ৩ সদস্য মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মুশতাক ও মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদকে পরিপূর্ণ অডিটের দায়িত্ব দেয়।
তারা দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত শুরু করলে দেখা যায় শুধুমাত্র ২০২৩ সালে ৪২ লক্ষ ৭৫হাজার ৪শত ৫৭ টাকার কোনো হদীস পাওয়া যাচ্ছে না। এক পর্যায়ে মাওলানা মুসা স্বীকার করেন যে আমি, আমার ভাই ইউসুফ, ছোট ভাই তারেক, হিসাব রক্ষক হারুন এবং নজির আমরা এই টাকার জন্য দায়ী। আমাকে সুযোগ দিলে এই টাকা পরিশোধ করে দেব।
আমেলার বৈঠকে তিনি তার আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন এবং তিনি তার প্রিন্সিপাল পদ থেকেও সরে দাড়াবেন বলে মৌখিকভাবে ওয়াদা করেন। আমেলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অস্থায়ী সদরে মুদাররিসের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মাদরাসার হোস্টেল সুপার মাওলানা আবদুস সুবহানকে এবং রমজানের পর শুরার বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৭ এপ্রি ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জামেয়ায় শুরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রিন্সিপাল নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয় এবং টাকা ও মানুষের দান করা গরু-ছাগল আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের ২য় ছেলে ইউসুফ, ৩য় ছেলে তারেক এবং হিসাব রক্ষক হারুন, নজিরকে বহিষ্কারের আদেশ জারি করা হয়। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে শুরার একদল সদস্য প্রস্তাব রাখেন মাওলানা হাবিবুর রহমানের বড় মেয়ের জামাই মাওলানা খতীব তাজুল ইসলামের নাম।
কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ ও সমস্ত ছাত্র খতীব তাজুলের ওপর অনাস্থা পেশ করেন। তারা জানান, খতীব তাজুল ইসলাম আকাবীরদের নিয়ে বিষোদগার করেন, তিনি কমাশিসা নামে বই লিখে কওমী মাদ্রাসার সিলেবাস নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।তিনি জামিয়ার ট্রাস্ট নামে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লন্ডন তুলে তিনি আত্মসাৎ করেন এবং জামেয়ার আল-মারকাজুল খায়ের নামের লাশ বহনকারী গাড়ির চেয়ারম্যান ছিলেন খতীব তাজুল তিনি এসব বিক্রি করে সব টাকা-পয়সা তিনি আত্মসাৎ করেন এ বিষয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে এছাড়াও খতিব তাজুলের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ ।সুতরাং তাকে প্রিন্সিপাল মানা যাবে না।
এই সময় বাহির থেকে আগত মাওলানা সহল আল রাজী ছাত্রদের হুমকি ধমকি দিয়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে ছাত্ররা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তিনি উচ্চস্বরে তাদেরকে ধমক দিয়ে হাত দিয়ে ঠেলে বের করে দিতে চাইলে তারা তাকে টেনে হেঁচড়ে বহিরাগত বের হ, বের হ, বলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন, এসময় তার পরণে থাকা পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি ছিড়ে যায়।
সালিশ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত থাকা বেফাকের সহ সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু ছাত্রদেরকে শান্ত হওয়ার জন্যে সামিউর রহমান মুসার পক্ষ নিয়ে উচ্চস্বরে আওয়াজ দিলে ছাত্ররা তাকে ঠেলে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়।
পরিবেশ শান্ত করার জন্যে শুরার সদস্য জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফসর আজীজ ছাত্রদের ধমক দিয়ে শান্ত হবার নির্দেশ দিলে ছাত্ররা চলে যায়।
পরে সহল আল রাজী তার ভাই জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ এহিয়াকে ফোন করে মাদ্রাসায় আনেন। হামলার কথা জানালে এহিয়া চৌধুরী থানায় ফোন করে পুলিশ নিয়ে আসেন মাদ্রাসায়। এহিয়া চৌধুরীর সাথে আসা ৪০/৫০ জন যুবক মারমুখি অবস্থায় মাদ্রাসায় প্রবেশ করে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
পরবর্তীতে মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ ও আফসর আজীজের পরামর্শে ১ সপ্তাহের জন্যে মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং ছাত্রদের বোর্ডিং ছাড়তে বাধ্য করা হয়।