![]() |
শাহিদুল তন্ময় |
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী ফুড প্রোডাক্ট (কাজী সেমাই), শাওন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ (শাওনের চাঁদ সেমাই) ও দ্বীন ফুড প্রোডাক্ট (ডায়মন্ড সেমাই) নামে এ তিনটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক অন্তত ৫০ মণ সেমাই উৎপাদন করে।
সরেজমিনে কাজী ফুড প্রোডাক্টে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে তালা দিয়ে ভেতরে চলছে সেমাই তৈরি। বাইরে থেকে ভেতরে লোকজনের উপস্থিতি বোঝা গেলেও দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও কেউ সাড়া দিলেন না। একপর্যায়ে পজিটিভ সংবাদ প্রচারের আশ্বাস দিলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, তৈরি করা সেমাই শুকানো হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। সঙ্গে মিশছে ধুলাবালি। ঘরের নোংরা মেঝেতেই রাখা হয়েছে সেমাই; যেখানে মাছিদের রাজত্ব।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, সেমাই ঢেকে রাখার জন্য তারা মালিক ও ম্যানেজারকে পলিথিন কিনে দেয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু তাদের পলিথিন এনে দেয়া হয়নি। ফলে সেমাইয়ে মাছি বসছে। শাওন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা যায়, নোংরা আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সেমাই। শ্রমিকদের গায়ে নেই স্বাস্থ্যসম্মত পোশাক, খোলা হাতেই মাখানো হচ্ছে ময়দা।
দ্বীন ফুড প্রোডাক্টে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরির পর তা ঘরের মেঝেতে ঢেলে চকচকে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখে তাড়াহুড়া করে গায়ে অ্যাপ্রোন পরেন শ্রমিকরা। এ সময় তারা জানান, গরমের কারণে অ্যাপ্রোন খুলে রেখেছিলেন তারা।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কাজী ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী কাজী বেনজীর আহমেদ। উল্টো শ্রমিকদের দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের আমরা অ্যাপ্রোন ও হ্যান্ডগ্লাভস দিয়েছি। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেমাই তৈরি করতে বলেছি। কিন্তু কিছু কিছু সময় তারা নির্দেশনা মানেন না।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা এসব সেমাই খেয়ে মানুষের ডায়রিয়ার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হবার শঙ্কা রয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আসিফুর রহমান বলেন, ‘বিসিক শিল্প নগরীর সেমাই কারখানাগুলো পরিদর্শন করে মানসম্মত সেমাই উৎপাদনের জন্য মালিক-শ্রমিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’