![]() |
ওয়েব নিউজ |
রাকিবুল হাসান অমিত (২২)। তার বাবা রাজমিস্ত্রি। দিন এনে দিন খেয়ে চলে তাদের পরিবার। তিন ভাই বোনের মধ্যে অমিত বড়। গত ২০২২ সালে মারা যায় তার মা। মা ছাড়া তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। মধ্যবিত্ত পরিবারের অমিতের চাকরী হয়েছে পুলিশে। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চূড়ান্ত ভাবে মনোনীত হয়েছেন এই তরুন। গত শনিবার দিনাজপুর জেলা থেকে কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত মনোনীত ৭৫ জনের নাম ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ। তাদের মধ্যে একজন রাকিবুল হাসান অমিত।
অমিত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়া (কলেজপাড়া) গ্রামের রায়হান আলীর ছেলে। সে ঘোড়াঘাট কে.সি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার মা বেবী বেগম মারা যান। রাজমিস্ত্রি বাবা কাজের ব্যস্ততায় সারাদিন বাহিরে থাকায় ছোট দুটি ভাই বোনের মাথায় ছাতা ধরতে হয় অমিতকে। এরমাঝে চলতি বছর পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আবেদন করেন অমিত। আবেদনে তার খরচ হয় ১২০ টাকা। নিজ উপজেলা ঘোড়াঘাট থেকে জেলা সদর দিনাজপুরের দুরত্ব প্রায় ৯৭ কিলোমিটার।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অমিত তাই দিনাজপুরে এক বন্ধুর ম্যাচে উঠে প্রিলিমিরানি, শারীরিক মাপ ও সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। সেসবে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সেখানেও নিজের মেধা ও যোগ্যতার প্রমান দেন এই তরুন।চূড়ান্ত তালিকায় তার নাম ঘোষণার পর আবেগে ভেঙ্গে পড়েন মা হারানো এই তরুন।
রাকিবুল হাসান অমিত বলেন, "কখন ভাবিনি এত সহজে আমার চাকরীটা হয়ে যাবে। আজ আমার মা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতো। ছোট থেকেই শুনেছি পুলিশের চাকুরী সোনার হরিণ। টাকা ছাড়া নাকি পুলিশে কোন ভাবেই চাকুরী হয় না। তবে সেই ধারণা ভুল। আমার শুধু আবেদন করতে ১২০ টাকা খরচ হয়েছে। এর বাহিরে এক পয়সাও খরচ হয়নি। আমি আমার পরিবার এবং সমাজের মুখ উজ্জল করতে চাই। পুলিশের পোশাক গায়ে জড়িয়ে মানুষের কল্যানে কাজ করে যেতে চাই।"
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, শতভাগ নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। অমিতের মত দিনাজপুর জেলা থেকে ৭৫ জন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। তাদেরমধ্যে ৬৪জন পুরুষ এবং ১১জন নারী। আমরা প্রত্যাশা করি পুলিশ কনস্টেবল পদে সদ্য মনোনীত এসব তরুন-তরুণীরা আগামীতে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে। তাদের মাধ্যমে বাহিনীর ভাবমূর্তি আরো উজ্জল হবে।"