আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

বিশ্বরো সাংবাদিকতা: প্যারিসের পয়সার প্রেস!

User Image
  ওয়েব নিউজ
প্রকাশিত - ১৯ এপ্রিল, ২০২৫   ০১:১৭ পিএম
webnews24
ছবি: || ওয়েব নিউজ
নিজেস্ব প্রতিবেদক

প্যারিস শহর — আলো, ভালোবাসা, আর ২০ ইউরো দিয়েই মিডিয়ায় জায়গা পাওয়ার শহর! একটি সময় ছিল যখন সাংবাদিক মানেই ছিল নিরপেক্ষ, তথ্যনির্ভর ও সাহসী কণ্ঠস্বর। এখন? এখন সাংবাদিক মানে "যে ভাইটা ২৫ ইউরো দিলেই আপনার প্রোগ্রাম কভার করে, আর ৫০ ইউরো দিলে তো আর কথাই নেই আপনাকে হিরো বানিয়ে ছাপে।"

জ্বী হ্যাঁ, প্যারিসে সাংবাদিকতা এখন আর তথ্য সংগ্রহের পেশা নয়, বরং পরিচিত জনের "প্রচার ব্যবস্থাপনা"। আপনার যদি পকেটে গুনে গুনে কিছু ইউরো থাকে, তাহলে আপনি হয়ে যেতে পারেন "সাংবাদিকদের চোখে সমাজসেবক","কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব" "প্রবাসী নেতৃবৃন্দ", কিংবা "সংস্কৃতির অগ্রদূত" ইত্যাদি।

সাক্ষাৎকার? মানেই নিজেরাই মুখ্য চরিত্র!
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ঘটনা ঘটলে একজন পেশাদার সাংবাদিক অপরিচিত অথচ প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের থেকে মতামত নেন। কিন্তু প্যারিসে নিয়ম একটু ভিন্ন। এখানে যদি আপনি সাংবাদিকের চেনা হন আর গোপনে তাকে কফির পেছনে ২০ ইউরো খরচ করান, তাহলেই আপনি হবেন “ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু”।

যেমন ধরুন, কারো বাসার ছাদে একটা টিন উড়ে গেল — সঙ্গে সঙ্গে নিউজ হয়ে গেল, “শহরের আবহাওয়ার চরম বিপর্যয়: জনাব নূর মামা অনুভূতি জানালেন”। কারণ? জনাব নূর মামা, সেই পরিচিত মুখ যিনি সাংবাদিক ভাইকে মাঝে মাঝে "হাত খরচ" দেন ইত্যাদি ।

স্পন্সর মানেই মুখের খবর!
প্রবাসী সমাজে যে কোনো ইভেন্ট মানেই স্পন্সর হান্ট। আর স্পন্সর মানেই সেই 'চিরপরিচিত জন' — যিনি আবার সাংবাদিকের কাছের মানুষ। এই স্পন্সরদাতা যতবার ইউরো দেন, ঠিক ততবার সংবাদে তার মুখ আসে। অনুষ্ঠানে কিছু না করলেও পরদিন সংবাদে দেখবেন তিনি “প্রধান আয়োজক ও সমাজসেবী হিসেবে” তালিকাভুক্ত!

প্যারিসে তেলের বন্যা: সাংবাদিকতায় ‘তেলতেলে’ বিপ্লব!
প্যারিসের বাতাসে এখন শুধু পারফিউম নয়, ঘন ঘন ঘোরাফেরা করছে তেলের গন্ধ। না, এটা রান্নার তেল নয়, এটা সেই বিশেষ ‘তেল’—যা কেউ কাউকে দিয়ে থাকে, পিঠে পিচ্চিক করে ঘষে, আর প্রয়োজনে ঝলসে দেয় সাংবাদিকতার শিরোনামকেও।

তেল ব্যবহারে একটা সীমা থাকা উচিত—যেমন রান্নায় বেশি তেল পড়লে খাওয়া যায় না, শরীর খারাপ করে, হৃদরোগ হয়। কিন্তু কিছু সাংবাদিক সেই নিয়ম মানেন না, বরং তারা তেল ছড়াতে ছড়াতে পুরো প্যারিসকেই ফ্রাইং প্যানে রূপান্তর করে ফেলেছেন!

২০ ইউরো দিলেই শুরু হয় তেল-উৎসব। কার জন্মদিন, কার বিয়ের বার্ষিকী—সব জানা যায়, আর সঙ্গে ফ্রি একটা বিশাল পরিমাণ ‘তেল মাখামাখি’। মনে হয়, এরা মানুষ না, চলন্ত তেলের ড্রাম!

যদি এই তেলটা খাবার হতো, নিশ্চয়ই বড়সড় অসুখ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হতো—কিন্তু না, এটা প্যারিসের সাংবাদিকতা, এখানে অসুস্থ হওয়ার সময় নেই, সবাই ব্যস্ত—কে কাকে কতটা ‘তেল’ দিতে পারছে, সেই প্রতিযোগিতায়!

এ যেন পেশা নয়, একধরনের ‘তেলতন্ত্র’—যেখানে সত্য খুঁজে পাওয়া যায় না, শুধু তেলে চপচপে মিথ্যে ভেসে বেড়ায়।

পরিচিতি পেলেন "বিশ্বরো সাংবাদিক" নামে!
সাধারণ প্রবাসীরা তাই এখন আর এইসব “নিউজ” দেখে সিরিয়াস হন না। উল্টে বলেন, “আরে ছাড়ো ভাই, ও তো সেই ২৫ ইউরো সাংবাদিক! টাকা দাও, নিউজ পাও!” আর এতে করে সাংবাদিক ভাইরাও হয়ে উঠেছেন ‘বিশ্বরো’ সাংবাদিক — তাদের চিনে না এমন প্রবাসী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

প্যারিসের বাতাসে এখন নতুন স্লোগান ভাসে —“সংবাদ চাইলে, নগদ দাও ভাই!”

শুদ্ধ সাংবাদিকতা আজ নিঃস্ব, আর ‘তেলবাজির’ এই ধারা যেন চলছে অজেয় গতিতে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায় — আর কতটা বিক্রি হবে কলম? আর কতটা গা বাঁচিয়ে চলবে "গল্পে-গল্পে রিপোর্ট"?

প্যারিস সাংবাদিক
ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন