ওয়েব নিউজ |
সফরসূচি গোপন রেখেই লিবিয়ার ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷ মঙ্গলবারের ওই আলোচনায় অভিবাসন সবচেয়ে গুরুত্ব পয়েছে বলে জানা গেছে৷ সফরকালে মেলোনির মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্যও সঙ্গে ছিলেন৷
ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম ইউরেক্টিভ ইটালি সরকারের একটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মেলোনির সফরে অভিবাসন ইস্যুটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে৷
ত্রিপোলিতে জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল রহমান দাবাইবার, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় অংশের নেতৃত্বে থাকা জেনারেল খলিফা হাফতার এবং জাতীয় ঐক্যের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস আল মেনফির সঙ্গে আলোচনা করেছেন মেলোনি৷
দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্ব দিয়ে মেলোনি জানান, এর মাধ্যমে ‘‘উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য’’ এসেছে৷
মানবপাচার প্রতিরোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা
ইউরেক্টিভ জানিয়েছে, আলোচনার সময় লিবিয়ার কর্মকর্তাদের ‘রোম প্রক্রিয়া’ নামের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান মেলোনি৷
গ্রুপটি গত গ্রীষ্মে চালু করা হয়েছিল৷ সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবপাচারসহ অভিবাসনের বিভিন্ন কারণগুলোকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করাই ছিল এই গ্রুপটির মূল উদ্দেশ্য৷
ইটালীয় দৈনিক পত্রিকা ইল ফোগলিও জানিয়েছে, মেলোনির এই সফরটি ‘‘ঘটনার আগের রাত পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল৷’’ সংবাদপত্রটি বলছে, জেনারেল হাফতারকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়নি৷ কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মেলোনি৷ এই কারণে বিষয়টি গোপন রাখা হয়৷
সংবাদপত্রটি আরো বলেছে, লিবিয়ার উপকূল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যাত্রা আটকে দেয়ার ক্ষেত্রে দেশটির নেতারা আরো কঠোর ভূমিকা রাখবে, এমন নিশ্চয়তা চেয়েছেন মেলোনি৷
বিভিন্ন খাতে কাজ করার অঙ্গীকার
সফর নিয়ে ইটালি সরকারের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন মেলোনি৷ অংশীদারত্বের মধ্য দিয়ে জ্বালানি এবং অবকাঠামো খাতেও কাজ করতে আগ্রহী ইটালি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হয়ে লিবিয়াসহ উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে ইটালি৷ অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় অর্থায়ন, অবকাঠামোগত প্রকল্পসহ কয়েকটি খাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে ইটালি ও লিবিয়ার৷ সফরের শুরুতে ত্রিপোলিতে জাতীয় ঐক্যের সরকারের সঙ্গে দেখা করেন ইটালির প্রতিনিধি দল৷ এরপর তারা জেনারেল হাফতারের সঙ্গেও দেখা করেন৷
ইটালি সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সফরকালে ‘মাত্তেই প্ল্যান ফর আফ্রিকা’ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, যুব উন্নয়ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার কয়েকটি সমঝোতায় সই করেছে দুই দেশ৷
বিদ্রোহী অংশের সঙ্গে সাক্ষাৎ
বেনগাজিতে ফিল্ড মার্শাল হাফতারের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মেলোনি৷ লিবিয়ার পূর্ব দিকের বন্যা কবলিত দেরনা পুনর্গঠনে সহযোগিতা দিতে আগ্রহ দেখান ইটালির সরকারপ্রধান৷
অভিবাসন ইস্যুতে লিবিয়ার কর্মকর্তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি৷
ইটালি সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গেল বছরের তুলনায় এ বছর অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে৷ অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে ইটালির দিকে না গিয়ে গ্রিসে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন৷ কারণ, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর গ্রিসে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েছে৷
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
ইটালির প্রতিনিধি দল যখন লিবিয়া সফর করছেন, তখন ‘লিবিয়ান মিলিশিয়াদের’ অর্থায়ন বন্ধ করতে ইটালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানস নামের একটি এনজিও৷ তাদের দাবি, এই অর্থ নিয়ে লিবিয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
এক্স প্ল্যাটফর্মে ৭ মে সংগঠনটি লিখেছে, ‘‘আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে, ইটালির পার্লামেন্ট আবারো লিবিয়ার জন্য লজ্জাজনক অর্থ অনুমোদন করা হবে৷ এর বিনিময়ে লিবিয়ায় অভিবাসীদের ধরপাকড় এবং আটক করা হবে, যাতে তারা ইউরোপে আশ্রয়ের অনুরোধ করতে না পারেন৷’’