ওয়েব নিউজ |
গত কয়েক বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে জীবিকার সন্ধানে ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি৷ তাদের অনেকেই আবার রোমানিয়া থেকে পালিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন৷ পালাতে গিয়ে সীমান্তে আটকও হয়েছেন অনেকে৷
রোমানিয়া আসতে কতো খরচ হয় তাদের আর কেন তাদের অনেকে পালিয়ে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন? ইউরোপের দেশ রোমানিয়াতে বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে দেশটিতে রয়েছেন ইনফোমাইগ্রেন্টস-এর সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ৷
রোমানিয়া-হাঙ্গেরির সীমান্তের কাছের শহর তিমিসোয়ারায় তাদের সাথে দেখা হয় তিন বাংলাদেশির৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে নিজেদের পরিস্থিতি জানালেন এই তিন অভিবাসী৷
প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ করে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রোমানিয়ায় পাড়ি জমান বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল মমিন৷ বর্তমানে একটি নির্মাণ খাতের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি৷
জানালেন, বাংলাদেশের একটি এজেন্সির সহায়তায় রোমানিয়ার কাজের সুযোগ পান তিনি৷ এর জন্য তার মোট খরচ হয়েছে সাড়ে নয় লাখ টাকা৷ শুধু তাই নয়, রোমানিয়াতে আসার পর একটি প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ আরো ৫০০ ডলার নিয়ে নেয়৷
আব্দুল মমিনের দাবি, দেশে দাললেরা মিথ্যা কথা বলে তার কাছ থেকে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে৷
এতো টাকা খরচ করে রোমানিয়া কেন এসেছেন জানতে চাইলে মমিন বলেন, ‘‘এতো হিউজ টাকা খরচ করে আমি আর কাউকে রোমানিয়ে আসতে বলব না৷’’
এখানকার পরিস্থিতর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, এখানে আসার আগে যেভাবে শুনেছেন তার চেয়ে বাস্তবতা ভিন্ন৷ কাজের পরিবেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দিনে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাদের৷
তিনি দাবি করেন, অসুস্থতায়ও কোনো ছুটি মেলে না৷ নেই স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা৷ আর এ কারণে নিজের চিকিৎসার টাকা নিজেকেই দিতে হয়৷
তিনি আরো জানান, অসুস্থ হয়ে কাজে যোগদান করতে না পারলে তাদের বেতন কেটে রাখা হয়৷
এতো টাকা খরচ করে আসার আসার বিষয়টি তার সাথে থাকা আর দুই বাংলাদেশির কাছ থেকেও জানা গেল৷
মোহাম্মদ শাহ আলম এবং মোহাম্মদ আবু তালেব জানালেন রোমানিয়াতে পৌঁছানো বাবদ তাদেরকে ৮-১০ লাখ টাকা গুণতে হয়েছে৷
২০২২ সালে রোমানিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেই সময়ের (২০২২ সালের আগের) পূর্ববর্তী দুই বছরে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি রোমানিয়ার কাজের ভিসা পেয়েছেন৷
তাদের বড় একটি অংশ রোমানিয়া আসার পর ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ইটালিতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছেন৷ এমনকি পালিয়ে রোমানিয়া ছাড়তে গিয়ে অনেকেই সীমান্তে আটক হয়েছেন৷
এই তিন বাংলাদেশির কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন বাংলাদেশিরা রোমানিয়া ছাড়তে চান৷
বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, যে সুযোগ-সুবিধার কথা শ্রমিকদের বলা হয়, রোমানিয়াতে আসার পর সেই সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না৷ আর তাই রোমানিয়া ছাড়তে চান বাংলাদেশিরা৷
তার দাবি, যে বেতন, কাজ এবং যেভাবে টিআরসি বা টেম্পরারি রেসিডেন্স পারমিট দেয়ার কথা বলা হয়, রোমানিয়া আসার পর দেখা যায় বিষয়টি তেমন নয়৷ আর এ কারণেই বাংলাদেশিরা রোমানিয়া ছেড়ে যান৷
নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করে মাসে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা আয় করেন শাহ আলম৷ সেইসাথে কোম্পানি থেকে তাকে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে৷ এসব মিলিয়ে নিজে ভালো আছেন বলে জানালেন এই অভিবাসী৷