ওয়েব নিউজ |
ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাসে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে গত সপ্তাহে পাঁচতলা ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান ২৪ বছর বয়সি বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ আনিসুর। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সাইপ্রাসে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় নাগরিকদের একটি দল।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাইপ্রাস পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ২৪ বছর বয়সি বাংলাদেশি অভিবাসীর নাম মোহাম্মদ আনিসুর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সাইপ্রাস মেইল জানায়, অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চলছিল সাইপ্রাসে। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিট নাগাদ পুলিশ এসে দরজায় ধাক্কা দিলে জানালা দিয়ে লাফ দেন বাংলাদেশি ওই ব্যক্তি।
একই বাড়িতে বসবাসকারী ২২ বছর বয়সি ফাহাদ নামে আরেক ব্যক্তি বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন৷ সাড়ে সাত মিটার নিচে পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় পড়ে যান তিনি। শরীরে একাধিক ফাটল নিয়ে গুরুতর অবস্থায় লিমাসোল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
মর্মান্তিক এই ঘটনার প্রতিবার শনিবার লিমাসোল সিটি সেন্টারে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটি, অভিবাসন সংস্থা কিসা এবং ফার রাইট ওয়াচ সাইপ্রাসসহ বেশ কিছু সংস্থা।
বিক্ষোভ মিছিলটি নিহত আনিসুর যেই ভবন থেকে লাফ দিয়েছিলেন সেখান থেকে শুরু হয়ে লিমাসোল পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভের সম্মুখে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, “রাষ্ট্র অভিবাসীকে হত্যা করেছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়োজকদের একজন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন,
যে মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে আনিসুরের মৃত্যু হয়েছে আমরা সেটির নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। এছাড়া তার দাফন ও মরদেহ নিজ দেশ পাঠানোর খরচ যেন সরকার বহন করে সেটির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, “আমরা গুরুতর আহত আরেক অভিবাসী ফাহাদকে কেন হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশের অবস্থান পরিষ্কার করার দাবি করছি। এছাড়া আটক হওয়া আরো সাত অভিবাসীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছতা দাবি করছি।
আনিসুর যেখান থাকতেন লিমাসোল সিটি সেন্টারের ওই ভবনে বাংলাদেশের মোট ১১ জন অভিবাসী থাকতেন। যাদের প্রত্যেকেই অনিয়মিত ছিলেন বলে মনে করছে সাইপ্রাস পুলিশ৷ বেশ কিছুদিন আগে এই ভবন ‘বসবাসের জন্য বিপজ্জনক’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। তবুও কীভাবে এখানে এতজন ভাড়া ছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
বিচারিক তদন্ত চলমান
সাইপ্রাস পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ সোমবার (১৫ এপ্রিল) ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছে, “অভিবাসী নিহতের ঘটনায় একটি বিচারিক তদন্ত খোলা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে।”
পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, প্রাথমিকভাবে পুলিশের সদস্যদের অভিবাসীদের অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশের অভিযোগ বা সহিংসতার অভিযোগের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, অভিযান চলাকাকে ভবনটিতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য প্রবেশ করার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ জানায়, এই বিশেষ অভিযানে পুলিশের মাত্র দুই জন সদস্য প্রাথমিকভাবে অ্যাপার্টমেন্টটিতে গিয়েছিলেন।
এই ঘটনায় সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক যেকোন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিকে ২২-৯০৮০৯৪ অথবা সিটিজেনস হটলাইন ১৪৬০-এ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সাইপ্রাস পুলিশ সদর দপ্তর।
এর আগে লিমাসোল পুলিশের তদন্ত বিভাগের প্রধান সাইপ্রাস মেইলকে বলেছিলেন,
পুলিশ ফ্ল্যাটে প্রবেশের আগেই, দুই অভিবাসী লাফ দিয়েছিলেন। একজন ভবনের এক পাশ থেকে লাফ দেন৷ পুলিশ তা আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷ সাহায্য করতে চেয়ে এক পুলিশ অফিসার দৌড়ানোর চেষ্টা করেন, তখন বুঝতে পারেন আরেকজন অভিবাসী জানালা দিয়ে ঝুলছেন।
পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা ফ্ল্যাটটিতে থাকা কয়েকজন অভিবাসীর কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার আগে ওই "অভিবাসী ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারান।"
সিরীয়দের আশ্রয় প্রক্রিয়া স্থগিত
ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে পূর্বের দেশ৷ সিরিয়া ও লেবানন থেকে মাত্র ১০০ মাইলের মধ্যে দ্বীপরাষ্ট্রটির অবস্থান৷ সম্প্রতি দেশটিতে সিরীয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েছে৷
সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে কাতারি সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিরীয়দের জন্য আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত করেছে সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটের সময় চলতি মাসে লেবানন থেকে নৌকায় করে এক হাজারেরও বেশি মানুষ সাইপ্রাসে পৌঁছেছে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সাইপ্রাস পৌঁছেছেন দুই হাজার ১৪০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তাদের বেশিরভাগই সিরিয়ান নাগরিক এবং লেবাননের উপকূল থেকেই তারা যাত্রা করেছিলেন৷
এমন পরিস্থিতিকে ‘অভিবাসন সংকট’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডোউলিডেস৷ লেবানিজ উপকূল থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণে ৮ এপ্রিল বৈরুতে সফর করেছেন তিনি৷ সঙ্গে ছিলেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান৷