আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

কীভাবে এত শক্তিশালী হলো সোমালিয়ার জলদস্যুরা ?

User Image
  শাহিদুল তন্ময়
প্রকাশিত - ১৫ মার্চ, ২০২৪   ০৮:৫৭ এএম
webnews24
ছবিঃ সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ায় দেশজুড়ে এখন আলোচনায় সোমালিয়া। কারণ, ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

হরহামেশাই জাহাজ ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যায় সোমালিয়ায়। মাত্র ১০ থেকে ২০ জলদস্যু মিলেই ছিনতাই করে নিয়ে যায় বিশাল সব পণ্যবাহী জাহাজ। সাধারণত সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার মূল পথ হলো মুক্তিপণ। কিন্তু কীভাবে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটে আসছে? সোমালিয়ার জলদস্যুরা এত শক্তিশালী হলো কীভাবে?

ইতিহাস বলছে, প্রাচীনকালে সোমালিয়া ছিল একটি জরুরি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মধ্যযুগে বেশ কয়েকটি সোমালি সাম্রাজ্য আঞ্চলিক বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিত। ষাটের দশকে ‘আধুনিক সোমালিয়া’র কাহিনী ছিল স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের। কিন্তু ১৯৬৯ সালে দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আলী শারমার তারই দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন এবং সোমালিয়া পার্লামেন্টের স্পিকার মুখতার মোহামেদ হুসেইন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। তবে ছয় দিনের মাথায় জেনারেল সিয়াদ বারের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এক সামরিক অভ্যুত্থান। মূলত তখনই অবসান ঘটে সোমালিয়ার গণতান্ত্রিক যুগের। দেশটিতে সামরিক স্বৈরাচারী শাসন চলে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। 

সামরিক স্বৈরাচারী শাসনের সময়েই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, ভেঙে পড়ে সমাজব্যবস্থা। লাখ লাখ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয় নেয় উদ্বাস্তুশিবির অথবা প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে। অনেকে শরণার্থী হয়ে চলে যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। মূলত এরপর থেকেই সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুতার উত্থান। একবিংশ শতকের প্রথম দিকে সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা মূলত সেখানে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। 

ডিআইডব্লিউ এবং মার্কিন হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির মতে, বিদেশি জাহাজ থেকে সোমালি উপকূলে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের বসবাসের পরিবেশ হুমকিতে পড়েছিল। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজ ওই অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বিকল্প আয় হিসেবে তারা বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই করা শুরু করে। 

২০০৯ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, সোমালিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশের মতো উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে। এমনকি সোমালিয়ার অনেক সরকারি কর্মকর্তা জলদস্যুদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অনেক বিশ্লেষকের মতে, সোমালিয়ায় জলদস্যুতা এখন বিশাল বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য দেশে থাকা সোমালিরা এই ব্যবসায় বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগও করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, সোমালিয়ার সেনাবাহিনী, সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এমনকি অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী এই লুটের টাকার ভাগ পায় থাকে।  

ধারণা করা হয়, জলস্যুদের মুক্তিপণের অর্থায়নে সেখানে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। গড়ে উঠছে বিলাসবহুল হোটেল। দেশটির অন্যান্য অংশ থেকেও বিনিয়োগকারীরা সেখানে অর্থ খাটাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জলদস্যুতা এখন সোমালিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।বিশাল মুনাফার কারণে সোমালিয়ার অনেক যুদ্ধবাজ গোত্র নেতারাই সুসংগঠিত উপায়ে ‘জলদস্যু ব্যবসা’ শুরু করেছে। দলে দলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তরুণরা জলদস্যুদের দলে নাম লেখাচ্ছে। তবে এমনসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যের রাঘববোয়ালরা রয়ে গেছে পর্দার অন্তরালেই।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন